যদি আপনি কোনো জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করে ভালো লাভ করে থাকেন, তাহলে তার উপর আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক হতে পারে। কিন্তু আয়কর আইনে এমন কিছু বিধানও রয়েছে, যার অধীনে আপনি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কর থেকে ছাড় পেতে পারেন। এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি।
PropertyTax: যখন কোনো ব্যক্তি জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করে এবং তা থেকে লক্ষ-কোটি টাকা লাভ হয়, তখন সেটি আয়কর বিভাগের নজরে আসে। আয়কর আইনের অধীনে এই লাভকে ক্যাপিটাল গেইন বলা হয় এবং এর উপর কর দিতে হয়। তবে, ভারত সরকার কিছু পরিস্থিতিতে কর ছাড় দেওয়ার জন্য বিশেষ বিধান তৈরি করেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল ধারা 54, 54F এবং 54B, যেগুলোর সাহায্যে করের পরিমাণ কমানো বা সম্পূর্ণরূপে বাঁচানো যেতে পারে।
ক্যাপিটাল গেইন কী?
যখন কোনো সম্পত্তি, যেমন জমি, বাড়ি বা প্লট, কেনা হয় এবং কিছু সময় পর বেশি দামে বিক্রি করা হয়, তখন যে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যায়, সেটি ক্যাপিটাল গেইন নামে পরিচিত। এটি দুই প্রকার:
- শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইন: যদি সম্পত্তি ২৪ মাসের কম সময়ের জন্য রাখা হয়ে থাকে।
- লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন: যদি সম্পত্তি ২৪ মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য রাখা হয়ে থাকে।
শর্ট টার্ম গেইনকে ব্যক্তির সাধারণ আয়ের সঙ্গে যোগ করা হয় এবং তার উপর ব্যক্তির আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী ট্যাক্স লাগে। অন্যদিকে লং টার্ম গেইনের উপর ২০% হারে কর ধার্য করা হয়, তবে ইনডেক্সেশন-এর সুবিধা পাওয়া যায়, যার ফলে ট্যাক্স কমতে পারে।
ট্যাক্স থেকে বাঁচার প্রধান উপায়
ধারা 54F এর অধীনে ছাড়
যদি আপনি আপনার জমি বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন, তা একটি আবাসিক বাড়ি কিনতে বা তৈরি করতে ব্যবহার করেন, তাহলে ধারা 54F এর অধীনে সম্পূর্ণ কর ছাড় পাওয়া যেতে পারে। শর্ত হল:
- নতুন বাড়ি এক বছর আগে কেনা হয়ে থাকতে হবে অথবা
- দুই বছরের মধ্যে কিনতে হবে অথবা
- তিন বছরের মধ্যে তৈরি করতে হবে
ধারা 54B – কৃষি জমি বিক্রির উপর ছাড়
যদি আপনি শহুরে কৃষি জমি বিক্রি করে থাকেন এবং লাভের টাকা থেকে দুই বছরের মধ্যে অন্য কৃষি জমি কেনেন, তাহলে ধারা 54B-এর অধীনে কর থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এই ছাড় তখনই প্রযোজ্য হবে যখন জমিটি বিক্রির আগে কমপক্ষে দুই বছর ধরে কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ক্যাপিটাল গেইন ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট স্কিম (CGDAS)
যদি আপনি এখনও পর্যন্ত নতুন সম্পত্তি না কিনে থাকেন, তাহলে লাভের টাকা Capital Gains Deposit Account Scheme-এ জমা করা যেতে পারে। এই প্রকল্পের অধীনে তৎক্ষণাৎ ট্যাক্স দিতে হয় না, কিন্তু টাকা সময়সীমার মধ্যে সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যবহার করতে হবে।
শহুরে এবং গ্রামীণ ভূমির মধ্যে পার্থক্য
- যদি ভূমি পৌরসভা বা নগর নিগমের সীমানা থেকে ২ কিমি বা তার বেশি দূরে অবস্থিত হয় এবং যেখানে জনসংখ্যা ১০,০০০-এর কম, তাহলে সেটিকে গ্রামীণ কৃষি জমি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধরনের জমি বিক্রি করলে কোনো ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স লাগে না।
- কিন্তু যদি জমিটি শহুরে এলাকায় পড়ে, তা কৃষি জমি হলেও, তাহলে তার থেকে হওয়া লাভের উপর ট্যাক্স লাগবে।
ট্যাক্স দেওয়ার আগে কী ध्यान রাখবেন?
- ভূমির ধরণ এবং অবস্থান: এটা স্থির করুন যে জমিটি শহুরে এলাকায় নাকি গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত।
- সময়ের হিসাব: কত সময় ধরে আপনি জমিটি রেখেছেন – ২৪ মাসের বেশি নাকি কম?
- ক্রয় মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে পার্থক্য: ইনডেক্সেশন-এর সঙ্গে হিসাব করুন যাতে প্রকৃত ট্যাক্স দায় সামনে আসে।
- নতুন সম্পত্তির পরিকল্পনা: আপনি কি লাভের টাকা থেকে নতুন বাড়ি বা কৃষি জমি কিনতে যাচ্ছেন?
- CGDAS-এ বিনিয়োগ: যদি সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগ না করা হয়, তাহলে টাকা এই অ্যাকাউন্টে রাখুন।
নিয়মের পরিবর্তনের সম্ভাবনা
ট্যাক্স সংক্রান্ত নিয়ম সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক সংশোধিত হতে পারে। তাই, সম্পত্তি বিক্রির আগে বর্তমান আর্থিক বছরের নিয়মাবলী অবশ্যই যাচাই করুন। কোনো বড় লেনদেন করার আগে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বা ট্যাক্স বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে আপনি অজান্তে কোনো ভুল না করেন এবং ভবিষ্যতে জরিমানা থেকে বাঁচতে পারেন।