২১ জুলাইয়ের সকালে ঘুম ভাঙল পথের রক্তস্নানে। মধ্যমগ্রামে পথ দুর্ঘটনায় মৃত দু'জন। উত্তাল হয়ে উঠল যশোর রোড। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিল স্থানীয়রা। ভাঙচুর চলল থানাতেও। নিয়ন্ত্রণে আনতে নামল র্যাফ।
বিপর্যয়ের ভোর: ডিভাইডার পেরোতেই মৃত্যু দুজনের
সোমবার ভোর চারটের সময় মধ্যমগ্রামের কাজী নজরুল ইসলাম সরণিতে ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন এস কে কাসেদ (২৫) এবং জিয়ারুল রহমান (৩৮)। তাঁরা ডিভাইডারের ফাঁক দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় আচমকা তাঁদের ধাক্কা মারে একটি মাছবোঝাই পিকআপ ভ্যান। ধাক্কার জেরে ছিটকে পড়েন বাইকের আরোহীরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পিছনে বসা জিয়ারুলের। গুরুতর আহত অবস্থায় কাসেদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
ভয়াবহ সংঘর্ষ, উল্টে গেল ভ্যান, পালাল চালক
ধাক্কার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় পিকআপ ভ্যানটি। ঘটনার পর মুহূর্তে চালক ও খালাসি এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়। স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এলেও তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চোখের সামনে এমন হৃদয়বিদারক মৃত্যু দেখে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনতা। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
রাস্তায় প্রতিবাদ, ৩ ঘণ্টা ধরে অবরোধ যশোর রোডে
দুর্ঘটনার পর মুহূর্তেই রাস্তায় নেমে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। দাবি ওঠে— পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন। অবরোধ চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। অবরোধের জেরে জাতীয় সড়ক ১২ নম্বরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুটে থমকে যায় যানচলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে অফিসযাত্রী থেকে জরুরি পরিষেবার গাড়িও।
পুলিশ ছিল, তবুও পালাল ঘাতক! — ক্ষুব্ধ জনতা
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল সোজাসুজি— "ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার থাকা সত্ত্বেও ঘাতক ভ্যান চালক পালিয়ে যায় কীভাবে?" তাঁদের বক্তব্য, যদি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তবে চালককে আটক করা যেত। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েই ক্ষোভ চরমে ওঠে। উত্তেজনার মাঝে পুলিশ কিয়ক্স এবং মধ্যমগ্রাম থানায় চলে ভাঙচুর। তীব্র স্লোগানে কাঁপে গোটা এলাকা।
উত্তাল পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামল র্যাফ
ঘটনাস্থলে তড়িঘড়ি পৌঁছন বারাসতের এসডিপিও এবং মধ্যমগ্রাম থানার ওসি। বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন তাঁরা। এরপরেই নামানো হয় র্যাফ বাহিনী। অবশেষে কড়া অবস্থানে গিয়ে তারা জনতাকে সড়কে থেকে সরিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যান চলাচলও ফের চালু হয় যশোর রোডে।
যশোর রোডে যানজট, প্রভাব শহর জুড়ে
এই দীর্ঘ অবরোধের প্রভাব শুধু মধ্যমগ্রামেই নয়, ছড়িয়ে পড়ে দমদম থেকে শুরু করে বারাসত পর্যন্ত। যশোর রোডে সকাল থেকেই তীব্র যানজটে নাকাল হয় নিত্যযাত্রীরা। বিশেষ করে অফিস টাইমে এমন একটি দুর্ঘটনা ও বিক্ষোভ জনজীবনে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে। এখনো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বজায় রয়েছে।