ইডি গুগল এবং মেটাকে অনলাইন বেটিং অ্যাপের বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। সরকারের পরামর্শ সত্ত্বেও এই অ্যাপগুলির প্রচারের কারণে অর্থ পাচারের আশঙ্কা করা হচ্ছে। টেক কোম্পানিগুলির জবাবদিহিতা এখন তদন্তের আওতায়।
Google or Meta: ভারতে অনলাইন বেটিংয়ের উপর লাগাম টানার প্রচেষ্টা এখন আরও জোরদার হয়েছে। এই سلسلےতে আজ ভারত সরকারের অর্থনৈতিক অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দুটি টেক জায়ান্ট কোম্পানি — Google এবং Meta — এর উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। অভিযোগ, এই দুটি কোম্পানি সরকারি সতর্কতা সত্ত্বেও অনলাইন বেটিং অ্যাপগুলির বিজ্ঞাপন তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রচার করেছে।
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র দেশে ইন্টারনেটের সক্রিয়তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে তাই নয়, টেক কোম্পানিগুলির অ্যাড পলিসি, নৈতিক দায়িত্ব এবং সরকারি নিয়ম পালনের উপরও গুরুতর বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
পুরো বিষয়টি কী?
ইডির সন্দেহ, Google এবং Meta জেনেশুনে অথবা অসাবধানতাবশত বেআইনি বেটিং অ্যাপগুলিকে তাদের প্ল্যাটফর্মের (যেমন Google Ads এবং Meta Ads Manager) মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের সুবিধা দিয়েছে। এই অ্যাপগুলির মাধ্যমে ইউজারদের প্রতারণামূলক প্ল্যাটফর্মের দিকে আকৃষ্ট করা হয়েছে, যার ফলে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইডি এটাও তদন্ত করছে যে এই দুটি কোম্পানি এই অ্যাপগুলি থেকে কত আয় করেছে, এবং তারা সরকারের পরামর্শ সত্ত্বেও এই প্ল্যাটফর্মগুলিকে প্রমোট করা চালিয়ে গেছে কিনা।
গুগল এবং মেটার হাজিরা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আজ, অর্থাৎ ২১শে জুলাই, ইডি দুটি কোম্পানির উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের দিল্লির সদর দফতরে হাজির হওয়ার জন্য সমন পাঠিয়েছে। এজেন্সি চায় এই কোম্পানিগুলির প্রতিনিধিরা এটা স্পষ্ট করুক:
- তারা যে অ্যাপগুলির প্রচার করছে, সেগুলি ভারতে অবৈধ, এটা কি তারা জানত?
- কোম্পানিগুলি কি ভারত সরকারের পরামর্শকে উপেক্ষা করেছে?
- এই প্রচার অভিযানগুলি থেকে কত বিজ্ঞাপন আয় (Ad Revenue) হয়েছে?
যদি তদন্তে এই প্রশ্নগুলির উত্তর সন্তোষজনক না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় জরিমানা বা আইনি পদক্ষেপ হতে পারে।
ভারত সরকারের পূর্বের জারি করা সতর্কতা
ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক আগেই ২০২২ সালে একটি স্পষ্ট পরামর্শ জারি করেছিল, যেখানে সমস্ত ডিজিটাল মিডিয়া, টিভি চ্যানেল এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বেটিং, জুয়া এবং গ্যাম্বলিংয়ের সাথে জড়িত কোনো বিজ্ঞাপন না চালানোর কথা বলা হয়েছিল। পরামর্শে বলা হয়েছিল যে এই ধরনের বিজ্ঞাপনগুলি যুবসমাজ এবং শিশুদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং এটি অর্থনৈতিক শোষণের দরজা খুলে দিতে পারে। তা সত্ত্বেও যদি কোনো কোম্পানি এই ধরনের বিজ্ঞাপন জারি রাখে, তাহলে এটি পরামর্শের সরাসরি অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে।
মানি লন্ডারিং এবং বিদেশি ফান্ডের যোগ
ইডি এই কেসটিকে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করছে না। এজেন্সির মতে, এই অ্যাপগুলি দেশের বাইরের অপারেটরদের দ্বারা চালিত হচ্ছে, যারা ভারতে লোকেদের বেটিংয়ে ফাঁসিয়ে টাকা বিদেশে পাঠাচ্ছে। এক্ষেত্রে এই বিষয়টি শুধুমাত্র ডিজিটাল এথিক্স বা প্রযুক্তির নয়, বরং জাতীয় সুরক্ষা এবং আর্থিক স্বচ্ছতার সাথেও যুক্ত। মনে করা হচ্ছে যে কিছু বেটিং অ্যাপ ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং বিদেশি অ্যাকাউন্টের ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং করেছে। এই ক্ষেত্রে গুগল এবং মেটার চোখ বন্ধ করে থাকা বা এড়িয়ে যাওয়া তাদেরও সন্দেহের মধ্যে দাঁড় করায়।
গুগল এবং মেটার নীরবতা
এখন পর্যন্ত গুগল এবং মেটা দু'জনের তরফ থেকেই কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। যদিও আজকের হাজিরার সময় সম্ভাবনা আছে যে কোম্পানিগুলি তাদের স্বপক্ষে নথি এবং যুক্তি পেশ করবে। কিছু মিডিয়া রিপোর্টের দাবি, দুটি কোম্পানি 'AI এবং algorithmic অ্যাড সার্ভিসেস'-এর কারণে এই অ্যাপগুলির পরিচয় করতে পারেনি। কিন্তু এই ব্যাখ্যা সরকারি এজেন্সিগুলিকে সন্তুষ্ট করতে পারবে কিনা, সেটা দেখার বিষয়।
টেক কোম্পানিগুলির ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব
এই মামলা একটি বড় নৈতিক এবং সামাজিক বিতর্ককে জন্ম দেয় — টেক কোম্পানিগুলোকে শুধুমাত্র প্রযুক্তি প্রদানকারী হিসেবে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে নাকি তাদের সামাজিক দায়িত্বও পালন করা উচিত? যখন কোম্পানিগুলোর আয়ের একটা বড় অংশ বিজ্ঞাপন থেকে আসে, তখন এটা জরুরি যে তারা এটা নিশ্চিত করে যে তাদের প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার না হয়। বিশেষভাবে ভারত এর মতো দেশে, যেখানে কোটি কোটি মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে প্রথমবার যুক্ত হয়েছে, সেখানে বিভ্রান্তিকর বা বেআইনি বিজ্ঞাপন মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।