দেশের মধ্যবিত্ত বিপদের মুখে চাকরি কমছে আয় হ্রাস পাচ্ছে

দেশের মধ্যবিত্ত বিপদের মুখে চাকরি কমছে আয় হ্রাস পাচ্ছে

মধ্যবিত্ত শ্রেণির অর্থনৈতিক দুরবস্থা বাড়ছে

ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, চাকরির সংখ্যা কমছে, আয় বৃদ্ধি থমকে গেছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য উদ্বেগজনক। দেশীয় বাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা যেমন এসইউভি, বাড়ি, ভ্রমণ—এসবের চাহিদা আগের মতো নেই, যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানিগুলির লাভে।

সঞ্চয় হ্রাস ও ব্যয়ের প্রভাব

Marcellus Investment Managers-এর প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়, মধ্যবিত্তদের সঞ্চয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালের অর্থবছরে দেশীয় সঞ্চয় জিডিপির সর্বনিম্ন অংশে পৌঁছেছে, যা ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই সঞ্চয়ের হ্রাস মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা কমাচ্ছে এবং দেশের ভোক্তা বাজারে প্রভাব ফেলছে।

চাকরির হ্রাস: স্থবিরতা আইটি ও রিটেলে

মধ্যবিত্তদের প্রধান আয়ের উৎস—আইটি, সফটওয়্যার, রিটেল সেক্টরে চাকরি বৃদ্ধি এখন স্থবির। ২০২০-এর আগে প্রতি ছয় বছরে চাকরি সংখ্যা দ্বিগুণ হতো; কিন্তু এখন প্রতি বছর মাত্র ৩% বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই হ্রাস মানে চাকরি দ্বিগুণ হতে ২৪ বছর লাগবে।

অটোমেশন ও এআই-এর প্রভাব

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের ফলে চাকরি হ্রাস আরও তীব্র। সৌরভ মুখোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, টিসিএস ২০২৫ সালের জুলাই মাসে তার কর্মীর ২% ছাঁটাই করেছে, যা প্রায় ১২,০০০ চাকরি। একইভাবে, এইচসিএল টেকের লক্ষ্য অল্প জনবল দিয়ে দ্বিগুণ আয় তৈরি করা। এ ধরনের উদ্যোগ মধ্যবিত্তের কর্মসংস্থানকে আরও দুর্বল করছে।

মজুরি বৃদ্ধির স্থবিরতা

মধ্যবিত্তের আয়ও মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। Marcellus-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬-এর আগে কর্মীদের মজুরি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো, কিন্তু এখন তা থেমে গেছে। এর ফলে ৪ কোটি কর্মী আগের তুলনায় দরিদ্র হয়ে পড়েছেন।

অর্থনৈতিক মন্দার বিস্তার

দেশের ভোক্তা ব্যয়, যা জিডিপির ৬০% গঠন করে, ২০২১-২৩ সালের পর থেকে হ্রাস পাচ্ছে। মধ্যবিত্তরা অতিরিক্ত ভোগ কমানোর কারণে কোম্পানিগুলির আয়ও কমেছে। ২০২৫ আর্থিক বছরে নিফটির কোম্পানিগুলির লাভে উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে।

সচেতনতার বার্তা

সৌরভ মুখোপাধ্যায় সতর্ক করছেন, যদি বেতন বৃদ্ধি এবং চাকরির সুযোগ না বাড়ে, তবে মধ্যবিত্তের আর্থিক দুরবস্থা আরও বাড়বে। এর প্রভাব শুধু পরিবারে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও পড়বে। দেশের অগ্রগতিও ধীর হবে এবং ভোক্তা বাজারের স্থিতিশীলতা হ্রাস পাবে।ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য বর্তমান সময়টি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের। চাকরি হ্রাস, আয় কমে যাওয়া, এবং মুদ্রাস্ফীতি—এসব মিলিতভাবে মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করছে। দেশের অর্থনীতি পুনরায় স্থিতিশীল করতে সরকার, প্রতিষ্ঠান ও জনগণ—সবাইকে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

Leave a comment