বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে চলেছে এক ফোনালাপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাগাতার শুল্ক হুমকির মাঝে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফোনে আলোচনা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি আর তার হুমকির চাপ বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই এই কল এক রাজনৈতিক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা তাঁর কাছে স্বাগত নয়। যদিও ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ‘সময়-পরীক্ষিত’, যা কেবল বাণিজ্য নয়, কৌশলগতও। এই অবস্থায় মোদী-পুতিনের ফোনালাপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, যেখানে ভারত তার অবস্থান ও দূরদৃষ্টি স্পষ্ট করলো। দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই এমন বন্ধুত্ব আরও মজবুত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন দুই নেতা, ট্রাম্পের চাপ অগ্রাহ্য করে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও শান্তির পথে ভারতের অবস্থান
ফোনালাপে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সাম্প্রতিক ইউক্রেন পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেছেন। যুদ্ধ কবলিত ইউক্রেনের প্রসঙ্গে দুই নেতার আলোচনায় উঠে এসেছে শান্তিপূর্ণ সমাধানের গুরুত্ব। মোদী পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত কোনোরকম সংঘাতের বিরুদ্ধে, দেশ সবসময় আলোচনা ও কূটনৈতিক পন্থাকে অগ্রাধিকার দেয়। রাশিয়ার এই যুদ্ধে ভারতের নিরপেক্ষ ও শান্তিপ্রিয় মনোভাব আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব পেয়েছে। মোদীর এই বার্তা রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভারত যুদ্ধ নয়, কেবল শান্তির পক্ষেই রয়েছে। মোদী ও পুতিনের এই সংলাপ কেবল কূটনৈতিক নয়, একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে, যেখানে শান্তির প্রতি ভারতের অঙ্গীকার প্রকাশ পায়।
ট্রাম্পের হুমকির মাঝে ভারত-রাশিয়ার বিশেষ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি
ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক হুমকির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মোদী ও পুতিনের একাত্মতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। দুই নেতাই ‘বিশেষ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ আরও মজবুত করার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। মার্কিন চাপ আর হুমকি উপেক্ষা করে ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দুই রাষ্ট্রনেতা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অংশীদারিত্ব শুধু বাণিজ্যিক নয়, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও গভীর হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে এই সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক কূটনীতির জন্য একটি শক্ত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে, যা ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে ভারত তার বহুমুখী কূটনীতির গুরুত্বকে ফের তুলে ধরছে।
পুতিনের ভারত সফরের আমন্ত্রণ ও দুই দেশের শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি
ফোনালাপের শেষে মোদী রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে চলতি বছরের শেষের দিকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানান। ভারত-রাশিয়া বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য এই আমন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর দু’বারের বৈঠকের প্রেক্ষাপটে এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করবে। এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক কালে মোদীর মস্কো সফর ও পরবর্তীতে রাশিয়ার কাজ়ানে SCO শীর্ষ সম্মেলনে দুই নেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এই সম্মেলনে কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, উন্নয়ন, নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক সহায়তা এবং সামরিক সহযোগিতার দিকনির্দেশনার বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও মস্কো সফরে এই সম্পর্কের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করেছেন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মোদী-পুতিন টিমের কৌশল
মোদীর নেতৃত্বে ভারত ও পুতিনের রাশিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী জোট গঠন করছে। ট্রাম্পের ট্যারিফ হুমকির মাঝে এই ফোনালাপ কেবলই একটি রাজনৈতিক কথোপকথন নয়, এটি বিশ্বে একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক মেসেজ। ভারত তার স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে কৌশলগতভাবে একাধিক মহাদেশের সঙ্গে সমন্বিত সম্পর্ক গড়ে তুলছে। রাশিয়ার সঙ্গে এই বন্ধুত্ব ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করছে, যেখানে সামরিক, বাণিজ্যিক, ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গভীর সহযোগিতার আশ্বাস রয়েছে। মোদী ও পুতিনের বার্তায় স্পষ্ট হয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপের বিরুদ্ধে ভারতের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি ও আত্মবিশ্বাস অবিচল।