মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ কাণ্ডে হাইকোর্টের ১২ জন অভিযুক্তকে খালাস করার রায় স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। যদিও আদালত তাঁদের মুক্তির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।
Mumbai Train Blast Case: ২০০৬ সালের মুম্বই লোকাল ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ সংক্রান্ত মামলায়, বম্বে হাইকোর্ট ১২ জন অভিযুক্তকে খালাস করার যে রায় দিয়েছিল, তার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, অভিযুক্তদের মুক্তির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই এবং তাঁদের পুনরায় हिरासत নেওয়া হবে না। এই মামলায় পরবর্তী শুনানির সময় শীর্ষ আদালত চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে।
হাইকোর্টের রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে যে, বম্বে হাইকোর্টের রায় আপাতত দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা হবে না এবং অন্য কোনও মামলায় এর উল্লেখ করা যাবে না। একই সাথে, আদালত ১২ জন অভিযুক্তকে নোটিশ জারি করে তাঁদের জবাব চেয়েছে। বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।
মহারাষ্ট্র সরকারের আপিলের উপর স্থগিতাদেশ
বম্বে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১২ই জুলাই এই মামলায় ১২ জন অভিযুক্তকে এই যুক্তিতে খালাস করে দিয়েছিল যে, অভিযোগকারী পক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। এই রায়কে মহারাষ্ট্র সরকার সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল যে, এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুতর এবং হাইকোর্টের রায় অনেক আইনি দিক উপেক্ষা করেছে।
হাইকোর্টের রায় এবং বিশেষ আদালতের সাজা
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে যে, অভিযোগকারী পক্ষ এটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, অভিযুক্তদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সাথে কোনও সম্পর্ক আছে। আদালত জানিয়েছে, প্রমাণের অভাবে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে অভিযুক্তরা এই অপরাধ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে একটি বিশেষ আদালত ১২ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। এদের মধ্যে একজন দোষী ২০২১ সালে মারা যান। হাইকোর্ট ২০২৩ সালে তাঁদের সবাইকে খালাস করে দেয়।
মহারাষ্ট্র এটিএস-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এই রায় মহারাষ্ট্র এটিএস (অ্যান্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড)-এর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছিল যে, অভিযুক্তরা সিমি (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া)-র সদস্য ছিল এবং তারা পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (LeT) সহায়তায় এই হামলা চালিয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের পর এটিএস-এর তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
২০০৬ সালে কী হয়েছিল?
১১ জুলাই, ২০০৬ সালে মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে একের পর এক সাতটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই বিস্ফোরণগুলি পশ্চিম রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশনে হয়েছিল, যখন ট্রেনগুলিতে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল। এই বিস্ফোরণে ১৮০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ৮০০ জনের বেশি আহত হয়েছিল। এই হামলা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন এবং বিচারপতি এনভি আঞ্জারিয়ার বেঞ্চ মহারাষ্ট্র সরকারের বিশেষ অনুমতি আবেদনের (Special Leave Petition - SLP) শুনানি করে। এই সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতকে জানান যে, এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুতর এবং এতে জরুরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।