নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ (ban) এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে হিংসাত্মক প্রতিবাদে ২১ জন যুবকের মৃত্যু ও ৩৫০ জনের বেশি আহত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার নিষেধাজ্ঞা (ban) প্রত্যাহার করে। প্রধানমন্ত্রী ওলি দুঃখ প্রকাশ করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
Nepal Violent Protests: নেপাল বর্তমানে এক গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ (ban) এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ছাত্রদের আন্দোলন এখন হিংসাত্মক রূপ ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির প্রথম বিবৃতি সামনে এসেছে। এই বিবৃতিতে তিনি প্রতিবাদে নিহত তরুণদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং একই সাথে তদন্তের (investigation) নির্দেশও দিয়েছেন। আসুন, পুরো বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বোঝার চেষ্টা করি।
সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণে ক্ষোভের আগুন
নেপাল সরকার সম্প্রতি Facebook এবং X (পূর্বের Twitter) সহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা (ban) জারির আদেশ দিয়েছিল। সরকারের যুক্তি ছিল যে এই প্ল্যাটফর্মগুলি ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে Gen-Z প্রজন্মকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
সোমবার হাজার হাজার ছাত্র ও তরুণ রাস্তায় নেমে আসে। তারা বলেন যে সোশ্যাল মিডিয়া কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর। এর পাশাপাশি, দুর্নীতির (corruption) বিরুদ্ধেও স্লোগান উঠতে শুরু করে।
প্রতিবাদ হিংসাত্মক রূপ ধারণ করে
শুরুতে প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি হিংসাত্মক রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন চত্বরে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। পুলিশ ভিড়কে থামাতে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
এই গুলিবর্ষণে এখন পর্যন্ত ২১ জন যুবকের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এই ঘটনা পুরো নেপালকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণ প্রত্যাহার
প্রতিবাদ এবং হিংসার পর নেপাল সরকার সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণ (ban) প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়। নেপালের যোগাযোগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী পৃথিবী সুব্বা গুরুং মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর জানান যে সরকার জনগণের অনুভূতিকে সম্মান করে এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি পুনরায় চালু করার আদেশ জারি করা হয়েছে।
তথ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে অবিলম্বে Facebook, X এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলি পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির প্রথম বিবৃতি
হিংসা ও প্রাণহানির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ওলির প্রথম বিবৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন–
“আজ Gen-Z প্রজন্মের প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলাকালীন যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। আমাদের প্রত্যাশা ছিল তরুণরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের দাবি জানাবে। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী (vested interest) গোষ্ঠী এই প্রতিবাদে অনুপ্রবেশ করে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় এবং নিরপরাধ নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে।”
ওলি স্পষ্ট করেছেন যে সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বন্ধ করার পক্ষে ছিল না। তিনি বলেন, “এর জন্য লাগাতার প্রতিবাদের কোনো প্রয়োজন ছিল না এবং এখন এটিকে চলতে দেওয়া হবে না।”
তদন্ত কমিটি গঠন
প্রধানমন্ত্রী ওলি ঘোষণা করেছেন যে এই সম্পূর্ণ ঘটনার তদন্তের (investigation) জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনে হিংসার পরিস্থিতি, দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলি উল্লেখ থাকবে।
বিপক্ষ ও সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা নেপালের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিরোধী দলগুলি সরকারের ওপর সরাসরি আক্রমণ করেছে এবং বলেছে যে এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। সুশীল সমাজ (civil society) এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলিও পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
অনেক সংগঠন বলেছে যে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণের (ban) মতো সিদ্ধান্ত তরুণদের কণ্ঠস্বর চেপে দেওয়ার সমান। তারা বলেছে যে এই ঘটনা নেপালের গণতন্ত্রের (democracy) জন্য একটি সতর্কবার্তা।