নেপালে পাঁচ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে গভীর রাতে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। সংসদ ভেঙে দেওয়া নিয়ে মতভেদ এখনও বিদ্যমান এবং Gen Z তরুণদের শর্তাবলী অপরিবর্তিত রয়েছে।
Nepal Protest: নেপাল বর্তমানে লাগাতার বিক্ষোভ ও উত্তাল পরিস্থিতির সম্মুখীন। শুক্রবার আন্দোলনের পঞ্চম দিন ছিল এবং পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাময়। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল এবং সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগদেলের নেতৃত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠক বহু ঘণ্টা ধরে চলে এবং অবশেষে এতে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে।
শীতল নিবাসে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক
এই বৈঠক রাষ্ট্রপতি ভবন শীতল নিবাসে অনুষ্ঠিত হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পাউডেল, সেনাপ্রধান, প্রবীণ আইনবিদ ওমপ্রকাশ আরিয়াল এবং সুশীলা কার্কি সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। নেপালের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকল পক্ষই স্বীকার করে নেয় যে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী মুখের প্রয়োজন। এই কারণেই কার্কির নাম সামনে আসে।
কার্কি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং তিনি দুর্নীতি-বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত। এই কারণেই GEN G আন্দোলনের উভয় পক্ষই শেষ পর্যন্ত তাঁর নামে সম্মত হয়।
সংসদ ভেঙে দেওয়া নিয়েও আলোচনা
বৈঠকের সময় কেবল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়েই নয়, সংসদ ভেঙে দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়। তবে, এই ইস্যুতে GEN G তরুণ এবং অন্যান্য পক্ষগুলির মধ্যে মতভেদ বজায় থাকে।
GEN G প্রতিনিধিদের বক্তব্য ছিল যে প্রথমে সংসদ ভেঙে দেওয়া হোক এবং তারপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। তাদের বিশ্বাস, যতক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরাতন রাজনৈতিক শক্তিগুলির প্রভাব শেষ হবে না। তবে এই ইস্যুতে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং আলোচনা পরের দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
GEN G-র কঠোর শর্তাবলী
GEN G প্রতিনিধিরা সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতির সামনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তাঁদের দুটি প্রধান শর্ত মানতে হবে। প্রথমত – অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত – অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে না রাষ্ট্রপতি, না কোনও পুরাতন রাজনৈতিক দলের কোনও ভূমিকা থাকবে।
তরুণদের অভিযোগ, পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলিই নেপালের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তাদের বিশ্বাস, দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ এই দলগুলি। এই কারণে তারা রাষ্ট্রপতি সহ পুরাতন নেতাদের সম্পূর্ণরূপে বাইরে রাখার দাবি জানায়।
আন্দোলনের কারণ কী
নেপালে গত পাঁচ দিন ধরে যে আন্দোলন চলছে, তা Gen Z Protest নামে পরিচিত। এর নেতৃত্বে রয়েছে তরুণ প্রজন্ম। তারা বলছে যে দেশে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি, বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা শেষ করতে হবে।
আন্দোলনের সময় সহিংসতাও হয়। এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জনগণের ক্ষোভ এত তীব্র হয়েছিল যে তারা রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং মন্ত্রীদের দপ্তর সংবলিত সিং দরবারকে নিশানা করে। অনেক মন্ত্রীর বাড়ি, হোটেল, দোকান এবং গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ক্ষোভের সরাসরি ফলস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং তাঁর পুরো মন্ত্রিসভাকে ইস্তফা দিতে হয়। জনগণ অনেক নেতাকে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় মারধর করে এবং তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
সুশীলা কার্কি কেন নির্বাচিত হলেন
নেপালে এই রীতি চলে আসছে যে যখনই কোনও অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, তখন তার দায়িত্ব বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত কোনও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দেওয়া হয়। এবারও সেই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে সুশীলা কার্কিকে নির্বাচন করা হয়েছে।
কার্কির নাম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি বিচার বিভাগে থাকার সময় থেকেই স্বচ্ছতা ও সততার পক্ষে ছিলেন। তিনি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতিও ছিলেন, ফলে তাঁর নির্বাচনকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংসদ কি ভেঙে দেওয়া হবে
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই যে নেপালের সংসদ কি ভেঙে দেওয়া হবে। GEN G তরুণদের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। তারা সংসদকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে নতুন ব্যবস্থা গঠনের দাবি জানাচ্ছে। তাদের মতে, এটাই দুর্নীতি এবং পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলির প্রভাব শেষ করার পথ।
তবে রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধান এই ইস্যুতে আপাতত সতর্ক। তাদের মতে, অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দেওয়া দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই আপাতত এই বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।