নতুন আয়কর বিল ২০২৫: সরলীকরণ এবং আধুনিকীকরণের পথে

নতুন আয়কর বিল ২০২৫: সরলীকরণ এবং আধুনিকীকরণের পথে

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আজ লোকসভায় নতুন আয়কর বিল ২০২৫ পেশ করবেন। ৬৩ বছর পুরনো আইনটির স্থান নেওয়া এই বিলে ২৮৫টি সংশোধন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন থাকবে।

নয়াদিল্লি। ৬৩ বছর পুরনো আয়কর আইন ১৯৬১-এর জায়গায় নতুন আয়কর বিল ২০২৫ (New Income Tax Bill 2025) আজ লোকসভায় পেশ করা হবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এই সংশোধিত বিলটি সংসদের কক্ষে পেশ করবেন। এতে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া ২৮৫টি প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩২টি বড় পরিবর্তনও রয়েছে। সরকারের দাবি, এই নতুন বিলটি পুরনো আইনের তুলনায় ছোট, সরল এবং আরও স্পষ্ট হবে।

১৩ ফেব্রুয়ারি পেশ করা হয়েছিল খসড়া, এখন আসছে সংশোধিত সংস্করণ

এই বিলটি প্রথমবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল। এরপর এটি বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পান্ডা-র নেতৃত্বে গঠিত ৩১ সদস্যের সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল। কমিটি প্রায় ২৮৫টি প্রস্তাব দেয়, যা জুলাই ২০২৫-এ পেশ করা রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন এই সংশোধনগুলির সঙ্গেই এর নতুন খসড়া পেশ হবে।

কেন জরুরি ছিল বিলটি ফেরত নিয়ে নতুন করে পেশ করা

কেন্দ্রীয় সংসদীয় কার্যমন্ত্রী কিরণ রিজিজুর মতে, যখন সংসদীয় কমিটি এত বড় அளவில் সংশোধনের প্রস্তাব দেয়, তখন প্রতিটি পরিবর্তনকে আলাদা আলাদা প্রস্তাব হিসেবে পেশ করা অবাস্তব হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে পুরো প্রক্রিয়াটি আবার শুরু করাই ভালো। রিজিজু বলেন, নতুন বিল পেশ করলে সময়ের সাশ্রয় হবে, আইনি স্বচ্ছতা আসবে এবং কাজকর্মের দক্ষতা বাড়বে।

পুরনো আইনের জায়গা নেবে নতুন বিল

নতুন আয়কর বিল ২০২৫, ১৯৬১ সালের পুরনো আয়কর আইনের জায়গা নেবে। এটি শুধু ছোট হবে তাই নয়, সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে যাতে সাধারণ করদাতারাও এটি সহজে বুঝতে পারে। বিলের উদ্দেশ্য হল মামলা-মোকদ্দমা (Litigation) কমানো এবং ট্যাক্স সিস্টেমকে আরও স্বচ্ছ করা।

বিলের আকার কমল, ভাষা হল সরল

বর্তমানে ১৯৬১ সালের আইন ৫.১২ লক্ষ শব্দের, যেখানে নতুন বিলটি হবে মাত্র ২.৬ লক্ষ শব্দের। এতে ৮১৯টি ধারার বদলে এখন ৫৩৬টি ধারা থাকবে এবং অধ্যায়ের সংখ্যাও ৪৭ থেকে কমিয়ে ২৩ করা হয়েছে। পুরনো আইনের ১,২০০টি বিধান এবং ৯০০টি ব্যাখ্যা বাতিল করা হয়েছে।

Tax Year-এর নতুন ধারণা

এই বিলের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল ‘Tax Year’-এর ধারণা। এখনও পর্যন্ত করদাতার আয় আগের বছরে (Previous Year) অর্জিত হয় এবং তার উপর ট্যাক্স পরের বছরে (Assessment Year) লাগে। নতুন বিধানে এই দুটিকে মিলিয়ে একটি ইউনিফাইড ট্যাক্স ইয়ার তৈরি করা হবে, যাতে গণনা এবং পরিশোধের প্রক্রিয়া সহজ হয়।

ট্রাস্ট এবং ডোনেশনের উপর নতুন নিয়ম

নতুন বিলে বেনামী দান শুধুমাত্র বিশুদ্ধ ধর্মীয় ট্রাস্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক পরিষেবা প্রদানকারী ট্রাস্টগুলি এখন এই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত হবে না। এই পদক্ষেপ ট্রাস্টগুলিতে স্বচ্ছতা এবং ফান্ডের অপব্যবহার রোধ করার জন্য নেওয়া হয়েছে।

ট্যাক্সপেয়ারদের জন্য স্বস্তির বিধান

বিলে ট্যাক্সপেয়ারদের ITR-এর সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেও TDS Refund-এর দাবি করার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে তার উপর কোনো জরিমানা লাগবে না। এতে সেই ট্যাক্সপেয়াররা স্বস্তি পাবেন যারা কোনো কারণে সময়মতো রিটার্ন দাখিল করতে পারেন না।

অর্ধেক আকারের হবে নতুন বিল

নতুন বিলটি পুরনো আইনের তুলনায় আকারে প্রায় অর্ধেক হবে। এর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যে এটি কেবল বিশেষজ্ঞদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও বুঝতে সহজ হবে। সরকারের বিশ্বাস, এতে বিবাদ এবং কোর্ট কেস কম হবে।

আধুনিক প্রযুক্তি এবং ক্রস-রেফারেন্সিং

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের মতে, এই বিলে টেকনিক্যাল আপগ্রেডেশন এবং আরও ভালো ক্রস-রেফারেন্সিং-এর সুবিধা থাকবে। এর মানে হল, কোনো বিধান বোঝার জন্য বার বার আলাদা আলাদা জায়গায় দেখার প্রয়োজন হবে না।

কিরণ রিজিজু বলেছেন, এত বড় পরিবর্তনের সঙ্গে বিলটিকে আবার পেশ করা একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। এতে শুধু সংসদের সময় বাঁচবে তাই নয়, ট্যাক্স আইন নিয়ে অস্পষ্টতাও দূর হবে।

Leave a comment