NSDL IPO ২০২৫: দাম, তারিখ এবং বিশদ তথ্য

NSDL IPO ২০২৫: দাম, তারিখ এবং বিশদ তথ্য

ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেড (NSDL)-এর ৪০১১ কোটি টাকার প্রাথমিক পাবলিক অফার (IPO) ২০২৫ সালের ৩০শে জুলাই সাবস্ক্রিপশনের জন্য খোলা হয়েছে। এই ইস্যুর প্রাইস ব্যান্ড ৭৬০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা প্রতি শেয়ার রাখা হয়েছে। এই আইপিওটি সম্পূর্ণরূপে অফার ফর সেল (OFS), অর্থাৎ এতে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করছেন। কোম্পানি এই ইস্যু থেকে সরাসরি কোনো পুঁজি পাবে না।

আইপিও খোলার একদিন আগে কোম্পানি অ্যাংকর বিনিয়োগকারীদের থেকে ১২০১ কোটি টাকা তুলেছে। অ্যাংকর ইনভেস্টরদের মধ্যে এলআইসি এবং আবু ধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (ADIA)-এর মতো বড় নাম রয়েছে, যা বাজারে আস্থার পরিবেশ তৈরি করেছে।

এনএসডিএল কী করে এবং এর বিজনেস মডেল কেমন?

NSDL-এর শুরু ১৯৯৬ সালে এবং এটি ভারতের প্রথম ডিপোজিটরি কোম্পানি ছিল। অর্থাৎ, এটি সেই সংস্থা যা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার এবং সিকিউরিটিজকে ইলেকট্রনিক ফর্মে সুরক্ষিত রাখে। বিনিয়োগকারীরা যে ডিমেট অ্যাকাউন্ট খোলেন, তার পরিচালনা এই ডিপোজিটরিগুলির মাধ্যমেই হয়। ভারতে বর্তমানে দুটি প্রধান ডিপোজিটরি রয়েছে - NSDL এবং CDSL।

এনএসডিএল তার দুটি সহায়ক কোম্পানির মাধ্যমে অন্যান্য পরিষেবাও প্রদান করে। এদের মধ্যে একটি হল NSDL Database Management Ltd, যা SEZ অনলাইন, ইন্স্যুরেন্স রিপোজিটরি, ডিজিটাল কেওয়াইসি এবং ই-গভর্নেন্স সম্পর্কিত পরিষেবা দেয়। অন্য সহায়ক কোম্পানি NSDL Payments Bank হল, যা প্রিপেইড কার্ড, ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং এবং মার্চেন্ট সার্ভিসের মতো ডিজিটাল ফিনান্স প্রোডাক্টে কাজ করে।

সরাসরি CDSL-এর সঙ্গে মোকাবিলা, কিন্তু শক্তিশালী পোর্টফোলিও আছে NSDL-এর

এনএসডিএল-এর সরাসরি টক্কর CDSL-এর সঙ্গে হয়, যা ইতিমধ্যেই লিস্টেড এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু NSDL-এর আকার এবং বাজারের অংশীদারিত্ব CDSL-এর থেকে অনেক বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের মোট ডিমেট ভ্যালুর ৮৯ শতাংশ NSDL-এর কাছে আছে।

যদিও ডিমেট অ্যাকাউন্টের সংখ্যার ক্ষেত্রে CDSL এগিয়ে, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ এবং বড় অঙ্কের লেনদেনের ক্ষেত্রে NSDL-এর আধিপত্য রয়েছে। এই কারণে NSDL-এর বিজনেস মডেল একটি আলাদা ধরনের ভরসা ও স্থায়িত্ব প্রদান করে।

এই ইস্যু থেকে কোম্পানি কোনো অর্থ পাবে না, পুরো ইস্যুটি অফার ফর সেল

এনএসডিএল-এর এই আইপিওটি সম্পূর্ণরূপে ওএফএস, যেখানে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক, এনএসই, এসবিআই এবং অন্যান্য বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করছেন। কোম্পানি এই ইস্যু থেকে কোনো নতুন ফান্ড তুলছে না, অর্থাৎ এই ফান্ড কোম্পানির ব্যবসার প্রসারে ব্যবহার করা হবে না।

এই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জন্য লক্ষণীয়, কারণ আইপিও-র উদ্দেশ্য সাধারণত ফান্ড তুলে গ্রোথে লাগানো হয়। এখানে তেমনটা নয়, তবে ব্রোকারেজ ফার্মগুলি এটিকে স্থিতিশীল রেভিনিউ এবং শক্তিশালী প্রফিটেবিলিটির কারণে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছে।

ব্রোকারেজ হাউস এবং অ্যানালিস্টরা এই আইপিও নিয়ে কী বলছেন?

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, NSDL-এর ভ্যালুয়েশন আকর্ষণীয় এবং এর ট্র্যাক রেকর্ড বেশ শক্তিশালী। আনন্দ রাঠি এই আইপিওকে 'সাবস্ক্রাইব' রেটিং দিয়েছেন। তাদের মতে, কোম্পানির মার্জিন শক্তিশালী এবং ডিমেট বাজারে এর গভীর প্রভাব রয়েছে।

এঞ্জেল ওয়ান-এর বক্তব্য, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য সুযোগ হতে পারে। তাদের বিশ্বাস, কোম্পানির কাছে টেকনোলজি, ডেটা এবং ফিনটেক সার্ভিসের ভালো কম্বিনেশন আছে, যা ভবিষ্যতে গ্রোথের ভালো সুযোগ তৈরি করবে।

NSDL-এর ফিনান্সিয়ালসের ওপর এক নজর, কেমন ছিল মুনাফা এবং আয়

NSDL অর্থবর্ষ ২০২৪-এ ১,০৮৯ কোটি টাকার মোট আয় করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। কোম্পানির নেট প্রফিট ২৫০ কোটি টাকা, যা বছর-দ-বছর ১২ শতাংশের বৃদ্ধি দেখায়।

এছাড়াও, কোম্পানির অপারেটিং মার্জিনও বেশ শক্তিশালী। এর রেভিনিউ মূলত ট্রানজ্যাকশন ফি, অ্যাকাউন্ট মেনটেনেন্স এবং অন্যান্য টেকনোলজি সার্ভিস থেকে আসে। এটি এমন একটি মডেল যা নিয়মিত এবং স্থিতিশীল আয় নিশ্চিত করে।

আইপিও-এর স্ট্রাকচার, লট সাইজ এবং রিটেল বিনিয়োগকারীর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য

এনএসডিএল আইপিও-এর প্রাইস ব্যান্ড ৭৬০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা প্রতি শেয়ার। একটি লটে ১৮টি শেয়ার আছে, অর্থাৎ রিটেল বিনিয়োগকারীকে কমপক্ষে ১৪,৪০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আইপিও ৩০শে জুলাই খোলা হয়েছে এবং ২০২৫ সালের ১লা আগস্ট পর্যন্ত সাবস্ক্রিপশনের জন্য খোলা থাকবে।

শেয়ারের অ্যালটমেন্ট ২রা আগস্ট হতে পারে এবং লিস্টিংয়ের সম্ভাব্য তারিখ ৬ই আগস্ট জানানো হয়েছে। এটি NSE এবং BSE উভয় এক্সচেঞ্জেই লিস্ট হবে।

অ্যাংকর ইনভেস্টরদের মধ্যে LIC এবং ADIA-এর মতো নাম, বাড়ল বাজারের ভরসা

আইপিও-এর আগে NSDL ১২০১ কোটি টাকা অ্যাংকর বিনিয়োগকারীদের থেকে তুলেছে। এতে ভারতের সবচেয়ে বড় বিমা কোম্পানি LIC এবং আবু ধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির মতো বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অংশ নিয়েছে।

এর থেকে বাজারে এই ইঙ্গিত গিয়েছে যে কোম্পানিকে ভরসা করা যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে এতে স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়তা থাকার সম্ভাবনা আছে।

Leave a comment