রসুন ও পেঁয়াজকে পৌরাণিক কাহিনীতে রাহু-কেতুর সন্তান হিসেবে মনে করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রের দৃষ্টিতে এগুলি তামসিক এবং সাধনা বা ব্রত পালনের সময় এগুলি ত্যাগ করা আবশ্যক। আয়ুর্বেদে এর ঔষধি গুণ রয়েছে এবং এটি হৃদরোগ ও রক্ত संबंधी রোগের জন্য উপকারী। ধর্মীয়, জ্যোতিষশাস্ত্রীয় ও চিকিৎসাগত দিক থেকে এর ব্যবহার অথবা ত্যাগ করার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।
Garlic Onion Mystery: পেঁয়াজ এবং রসুন শুধুমাত্র রোজকার সবজি নয়, বরং পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এগুলি রাহু ও কেতুর সন্তান। এগুলি তামসিক খাবার, সেইজন্য নবরাত্রি, একাদশী এবং অন্যান্য ব্রততে এগুলি ত্যাগ করা হয়। আয়ুর্বেদ অনুসারে এটি হৃদয় এবং রক্তের রোগ নিরাময়ের জন্য ঔষধি উপাদান। জ্যোতিষশাস্ত্রীয় মতে, এগুলির সেবন অথবা ত্যাগ রাহু-কেতুর শক্তি এবং সাধনার উপর প্রভাব ফেলে।
পৌরাণিক কাহিনী: অমৃতের ফোঁটা থেকে উৎপত্তি
সমুদ্র মন্থনের সময় যখন দেবতারা এবং অসুরেরা অমৃত লাভ করেছিলেন, তখন রাহু এবং কেতু ছল করে অমৃত পান করে ফেলেছিল। ভগবান বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে তাদের মাথা কেটে দেন। বিশ্বাস করা হয় যে, রাহুর রক্ত থেকে পেঁয়াজ এবং কেতুর রক্ত থেকে রসুনের জন্ম হয়েছে। এই কারণে পৌরাণিকভাবে এদের রাহু-কেতুর সন্তান বলা হয়।
এই কাহিনী অনুসারে, এই সবজিগুলি সাধনা এবং পূজার সময় নিষিদ্ধ বলে ধরা হয়। আরও মনে করা হয় যে, এগুলি খেলে মানসিক অস্থিরতা এবং কামনা বাসনা বৃদ্ধি পায়।
রাহু-কেতু দোষ থাকলে ঔষধিগুণে লাভ
জ্যোতিষশাস্ত্রে রাহু এবং কেতুকে মানুষের মোহ, ভ্রম এবং কামনার সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হয়। এই গ্রহগুলি মানসিক অস্থিরতা এবং চঞ্চলতার কারণ হতে পারে। একইভাবে রসুন এবং পেঁয়াজকে তামসিক খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। সাধনার সময় এটি খেলে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হতে পারে।
তবে, রাহু-কেতু দোষ রয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য এর ঔষধি বৈশিষ্ট্যগুলিও উপকারী বলে মনে করা হয়। রসুন এবং পেঁয়াজে থাকা ঔষধি গুণ রক্ত পরিশুদ্ধি, হৃদরোগের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পৌরাণিক ও শাস্ত্রীয় প্রমাণ
- ভগবদ্গীতা (অধ্যায় ১৭, শ্লোক ৮-১০): গীতাতে খাদ্যকে সাত্ত্বিক, রাজসিক এবং তামসিক এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তীব্র এবং জ্বালা সৃষ্টিকারী খাবারকে রাজসিক-তামসিক বলা হয়েছে। রসুন-পেঁয়াজ এই শ্রেণীতে পড়ে।
- আয়ুর্বেদ- চরক সংহিতা: রসুন (Rasona) হৃদরোগ এবং রক্ত বিকারে উপকারী। তবে সাধনা ও ব্রতের সময় এটি ত্যাগ করা উচিত।
- ভাগবত পুরাণ এবং বিষ্ণু পুরাণ: সমুদ্র মন্থনের কাহিনীতে রাহু এবং কেতুর রক্ত থেকে পেঁয়াজ এবং রসুন উৎপত্তির ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়।
- মনুস্মৃতি: ব্রাহ্মণ এবং সাধকের জন্য অশুদ্ধ খাদ্যের মধ্যে রসুন এবং পেঁয়াজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- বৈষ্ণব এবং শৈব ঐতিহ্য: গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যে পেঁয়াজ এবং রসুনকে তামসিক মনে করে সাধনার সময় ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিবপুরাণ এবং লিঙ্গপুরাণেও সাধককে তামসিক খাবার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
- ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ব্রত: নবরাত্রি, একাদশী, সোমব্রত, বৃহস্পতিবারের ব্রতের মতো অনুষ্ঠানে পেঁয়াজ এবং রসুন খাওয়া নিষিদ্ধ। চন্দ্র, বৃহস্পতি এবং শুক্রের পূজার সময় এটি খেলে মন চঞ্চল হয়ে যায়। মন্দিরে ভোগ ও প্রসাদে এর স্থান নেই।
রাহু-কেতু দোষ এবং প্রতিকার
যদি রাশিতে রাহু-কেতু দোষ থাকে, তাহলে সুষম আহার এবং নিষিদ্ধ জিনিসগুলি পালন করা উপকারী।
- রাহুর জন্য কালো তিল, নীল বস্ত্র এবং সরষের তেল দান করুন।
- কেতুর জন্য কম্বল, কুকুরকে খাবার, তিল এবং পশমের বস্ত্র দান করুন।
- মন্ত্র জপ: ওঁ রাং রাহাভে নমঃ এবং ওঁ কেং কেতবে নমঃ।
- পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার দিনে বিশেষ ধ্যান এবং দান করুন।
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা এবং সতর্কতা
- ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে: পেঁয়াজ এবং রসুন ত্যাগ করা সাধনা এবং মানসিক শুদ্ধতার জন্য প্রয়োজন।
- চিকিৎসাগত দৃষ্টিকোণ থেকে: এগুলি ঔষধিগুণে পরিপূর্ণ এবং শরীরকে রোগ থেকে বাঁচায়।
- জ্যোতিষশাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে: এর সেবন অথবা ত্যাগ সরাসরি রাহু-কেতুর শক্তি এবং মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।
রসুন এবং পেঁয়াজের সেবন সময়, পরিস্থিতি এবং উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে জীবনের উপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। এর পৌরাণিক, জ্যোতিষশাস্ত্রীয় এবং আয়ুর্বেদিক গুরুত্ব অনুধাবন করে তবেই এটিকে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত অথবা ত্যাগ করা উচিত।