দাঁতের গর্ত থেকে হার্ট অ্যাটাক মুখের স্বাস্থ্যেই লুকিয়ে হৃদরোগের বড় ইঙ্গিত

দাঁতের গর্ত থেকে হার্ট অ্যাটাক মুখের স্বাস্থ্যেই লুকিয়ে হৃদরোগের বড় ইঙ্গিত

মুখ নয়, এ যেন হৃদয়ের দরজা!

মুখমণ্ডল হল শরীরের জানালা—এটা শুনে অবাক হবেন না! চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, অনেক রোগের সূচনা মুখ থেকেই হয়। আমাদের দাঁত, মাড়ি, জিহ্বা—সবই শরীরের নানা সমস্যার ইঙ্গিত আগেভাগে দিতে পারে। যেমন, রক্তশূন্যতা, ক্যানসার, ডায়াবেটিস এমনকি হৃদরোগও প্রথমে মুখেই নিজের ছাপ ফেলে। নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিলে এই বিপদ এড়ানো সম্ভব।

মুখের ক্ষত–ফোলাভাবকে হালকা ভাববেন না

আপনার মাড়িতে রক্ত পড়ে? ঘা হয়? কিংবা দাঁতের পাশে হালকা ফোলাভাব? এগুলো কিন্তু শুধুই দাঁতের সমস্যা নয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মুখের এই ছোট ছোট অস্বস্তিগুলো শরীরের ভিতরে থাকা অনেক বড় রোগের ইঙ্গিত দেয়। দাঁতের গহ্বর বা আলসার থেকেও জন্ম নিতে পারে মারাত্মক সিস্টেমিক জটিলতা। তাই এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করা মানেই বিপদকে আমন্ত্রণ।

মুখে ব্যাকটেরিয়া বাড়লে বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি

আপনি যদি দাঁতের গর্ত, পোকা খাওয়া দাঁত, মাড়ির রোগ নিয়ে দিন গুজরান করেন, তাহলে সাবধান! কারণ মুখের এই ব্যাকটেরিয়া সহজেই রক্তপ্রবাহে মিশে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী, এই জীবাণুরাই হৃদযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটিয়ে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়। মুখের সংক্রমণ আর হৃদযন্ত্রের সংযোগ আজ আর শুধুই গবেষণার কথা নয়—এটা এখন বাস্তব।

দাঁতের অসুখ মানেই হার্ট অ্যাটাকের বাড়তি আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞ ডঃ শিল্পী বহল স্পষ্টই জানাচ্ছেন, মাড়ির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা প্রায় ২৮% বেশি! যাঁদের মাড়ি ফুলে যায়, রক্ত পড়ে বা পেরিওডেন্টাল ডিজিজে ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদস্পন্দনের অনিয়ম বা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি হয়ে যায়। দাঁতের সমস্যা আর হৃদযন্ত্রের অসুস্থতা—এ দু’টি যেন এখন পরস্পরের ছায়া।

মুখের জীবাণু থেকে জন্ম নিতে পারে এন্ডোকার্ডাইটিস

ব্যাকটেরিয়া শুধু দাঁতের আশপাশেই ক্ষয় সৃষ্টি করে না, বরং রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পৌঁছে যায় হৃদযন্ত্রের অভ্যন্তরেও। তখনই জন্ম নেয় এন্ডোকার্ডাইটিস—এক ধরনের হৃদযন্ত্রের আস্তরণে সংক্রমণ। এছাড়াও, শৈশবকালেই যদি দাঁতের সঠিক যত্ন না নেওয়া হয়, তাহলে বড়বেলায় সেই দুর্বলতা ধমনীতে অবরোধ তৈরি করতে পারে। এই অবস্থা থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোকও ডেকে আনতে পারে।

সঠিক ব্রাশিং–ফ্লসিং অভ্যাসই আসল জীবনদাতা

দাঁতের যত্ন মানেই শুধু টুথপেস্ট মাখানো নয়। রোজ অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লস ব্যবহার করা ও রাতে ব্রাশ না করলে জীবাণু বাড়ে বহুগুণ। দাঁত ফাঁকে জমে থাকা খাবারের অংশই ধীরে ধীরে গহ্বর বা পচনের কারণ হয়। এক্ষেত্রে নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপও জরুরি। আপনার ডেন্টিস্টের সঙ্গে তিন মাস অন্তর দেখা করাই হল সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর অভ্যাস।

খাদ্যতালিকাতেও সচেতনতা জরুরি

শুধু ব্রাশ করলেই চলবে না, খাবারেও থাকতে হবে দাঁতের যত্নের ছাপ। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার—যেমন দুধ, দই, ডিম, বাদাম—দাঁত ও হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। মুখে শুষ্কভাব, ফাটল বা গন্ধ রোধ করতে জলের পরিমাণও পর্যাপ্ত রাখতে হবে। মনে রাখবেন, মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে শরীরও থাকবে ফিট।

দাঁতের যত্ন মানেই হৃদয়ের সুরক্ষা

একটা কালো দাঁতের গর্ত, মাড়ির লালচে ভাব কিংবা একটি আলসার—এই ছোট ছোট উপসর্গগুলোকেই আজ থেকে গুরুত্ব দিন। কারণ এই ‘ছোট’গুলোই ভবিষ্যতের বড় বিপদের ঘন্টাধ্বনি। দাঁতের সুস্থতা মানেই শুধু হাসির সৌন্দর্য নয়—এটা আপনার হৃদয়, মস্তিষ্ক ও শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার প্রাথমিক স্তম্ভ।

Leave a comment