হাতজোড় করে কাকুতি-মিনতি করেছিল পাকিস্তান বিস্ফোরক দাবি মোদির সংসদে

হাতজোড় করে কাকুতি-মিনতি করেছিল পাকিস্তান বিস্ফোরক দাবি মোদির সংসদে

লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর রণহুংকার!

ভারতের সামরিক শক্তির কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান—সরাসরি লোকসভায় দাঁড়িয়ে এমনই দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার লোকসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে 'অপারেশন সিঁদুর'-এর কথা টেনে এনে মোদি বলেন, পাকিস্তানের ডিজিএমও (DGMO) নিজেই ভারতের কাছে মিনতি করেন যেন অভিযান বন্ধ করা হয়। মোদির এই মন্তব্য ঘিরে কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ।

‘আর মার সহ্য হচ্ছে না, দয়া করে থামাও’—ফোনে কাতর অনুরোধ পাকিস্তানের

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ মে পাকিস্তানের তরফে আমাদের ডিজিএমও-কে ফোন করে বলা হয়—অনেক হয়েছে, এবার দয়া করে থামাও। আর আমাদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। মোদির দাবি, পাকিস্তানের সেনার শীর্ষ কর্তারা হাতজোড় করে ভারতের কাছে কাকুতি-মিনতি করেন। তিনি স্পষ্ট করেন, ভারত কোনও দিন আগ্রাসন চায়নি। কিন্তু প্রয়োজনে কড়া জবাব দিতেই হয়।

‘বিশ্বের কোনও দেশ আমাদের থামতে বলেনি’—মোদি জোর গলায়

নিজের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রসঙ্গও আনেন মোদি। বলেন, বিশ্বের কোনও রাষ্ট্রনেতা আমাদের অভিযান বন্ধ করতে বলেননি। কারণ তারা জানতেন, ভারত অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছে। আমরা শান্তি চাই, কিন্তু দুর্বল দেশ নই। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে, বিজেপি শিবিরে উঠে আসে দেশাত্মবোধের ঝড়। বিরোধীরা যদিও এই মন্তব্যকে মোদির 'নাটকীয়তা' বলেই কটাক্ষ করেছেন।

অপারেশন সিঁদুর কী? আর কেন এত তাৎপর্যপূর্ণ এই দাবি?

২০১৯ সালের পরবর্তী সময়ে ভারতের একাধিক প্রতিরক্ষা অভিযান গোপনে পরিচালিত হয়েছিল সীমান্তে। সেগুলির অন্যতম হল ‘অপারেশন সিঁদুর’। যদিও সরকারিভাবে এই অভিযান সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তবুও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে, এই অপারেশন পাকিস্তানকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছিল। আর সেই কারণেই পাকিস্তান নিজেই ভারতকে থামানোর অনুরোধ করেছিল।

সেনার শক্তি নিয়ে বার্তা, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?

অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদির এই বক্তব্য নিছক কাকতালীয় নয়। দেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতেই সংসদে এমন স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি। সেনার কার্যক্ষমতা এবং দেশের ‘মজবুত নেতৃত্ব’-এর কথাই তুলে ধরেছেন তিনি। এই ভাষণ রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠবে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

ভিডিও ভাইরাল, উত্তাল সামাজিক মাধ্যম

প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছে। ভক্তরা মোদিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন—এটাই নেতা, পাকিস্তানকে যেমন শিক্ষা দেওয়া উচিত, তেমনই হয়েছে, এমন মন্তব্যে ভরে গিয়েছে এক্স ও ফেসবুক। বিরোধীরা আবার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, যদি এতটাই কড়া বার্তা দিয়ে থাকেন, তবে সেই অভিযান আগে সরকারিভাবে প্রকাশ্যে আনা হয়নি কেন?

বিপরীতে বিরোধীদের প্রশ্ন—তথ্যপ্রমাণ কোথায়?

কংগ্রেস ও তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, “এমন কাকুতি-মিনতির প্রমাণ কী? কোনও অডিও রেকর্ডিং, চিঠিপত্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি আছে কি?” বিরোধীরা একে ‘ভোটমুখী নাটক’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। পাশাপাশি তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, সীমান্তে বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু এখনও উদ্বেগজনক, তাই যুদ্ধগাঁথা শুনিয়ে কাজের থেকে মন ঘোরানো হচ্ছে।

শেষকথা, রাজনীতির মঞ্চে আবারও উঠে এল সীমান্ত প্রসঙ্গ

সেনার অভিযান, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মিশেলে প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্য নিঃসন্দেহে দেশবাসীর মধ্যে এক নতুন আবেগ জাগাতে পেরেছে। তবে এর রাজনৈতিক অভিঘাত কতটা গভীর হবে, এবং সাধারণ মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবেন এই বার্তা, তা সময় বলবে।

Leave a comment