পাটনার কাব গ্রামে অস্ত্র উঁচিয়ে রিল ভাইরাল হওয়ার পরে মূল অভিযুক্ত মণীশ কাব্যকে দেশি কট্টা ও কার্তুজ-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে এক সাংবাদিক-সহ অনেক অপরাধী ছিল।
Patna: বিহারের রাজধানী পাটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি রিল পুলিশ বিভাগ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। ‘লিমিট মে রহিয়ে’ গানের উপর তৈরি এই ভিডিওতে অস্ত্র উঁচিয়ে যুবকদের প্রকাশ্যভাবে আইনকে উপহাস করতে দেখা গেছে। এই রিলের পিছনে কেবল একজন গায়ক নয়, একজন তথাকথিত সাংবাদিক এবং অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত অনেক যুবকও ছিল। পুলিশের তৎপরতায় এই ঘটনায় বড়সড়ো পর্দাফাঁস হয়েছে এবং মূল অভিযুক্তকে দেশি কট্টা ও তাজা কার্তুজ-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভিডিও ভাইরাল, পুলিশ তৎপর
এই ভিডিওটি পালিগঞ্জ মহকুমা এলাকার রানিতলাব থানার অন্তর্গত কাব গ্রামের, যেখানে কিছু যুবক 'লিমিট মে রহিয়ে' গানে পোজ দেওয়ার সময় অস্ত্র উঁচিয়ে দেখাচ্ছিল। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তৎপর হয়ে তদন্ত শুরু করে। ভিডিওটি কেবল আইনকে উপহাস করছিল না, পাশাপাশি গ্রামে ভীতির পরিবেশও তৈরি করছিল। সিটি এসপি (পশ্চিম) ভানু প্রতাপ সিং এই বিষয়ে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে বলেন যে, 'ভিডিওটির মাধ্যমে গ্রামবাসীদের মধ্যে ভয় ছড়ানোর উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল। এটা একটা সুচিন্তিত রণনীতি ছিল, যা এখন অপরাধে পরিণত হয়েছে।'
মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার
ভিডিওটির তদন্ত এবং লোকেশন ট্র্যাক করার পরে পুলিশ কাব গ্রামের বাসিন্দা মণীশ কুমার ওরফে মণীশ কাব্যকে গ্রেফতার করেছে। তার কাছ থেকে একটি দেশি কট্টা এবং তিনটি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। মণীশ কাব্য কেবল এই ভিডিওর প্রধান মুখ নয়, পাশাপাশি সে গানের লেখক এবং গায়কও। পুলিশি তদন্তে এ-ও জানা গেছে যে মণীশের বিরুদ্ধে আগে থেকেই চারটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা আছে, যার সবগুলোই অস্ত্র আইন অনুযায়ী।
এক সাংবাদিক-সহ অনেক অপরাধী মুখ ভিডিওতে
পুলিশি তদন্তে ভিডিওতে দেখা যাওয়া অন্যান্য ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম নিচে দেওয়া হল:
- রত্নেশ কুমার – যে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়
- সূর্য কুমার, বরুণ সিং, সরদার কুমার, জীতেন্দ্র সিং
- এবং দিব্যাংশ কুমার ওরফে অংশু – বালির ব্যবসায়ী রামাকান্ত যাদবের হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত
সমস্ত অভিযুক্তের পরিচয় যাচাই করে জানা গেছে যে তারা সকলেই বিভিন্ন থানায় অপরাধমূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, একজন তথাকথিত সাংবাদিক, যিনি সমাজে তথ্যের বাহক হিসেবে পরিচিত, তিনিও এই অস্ত্র-রিল গ্যাংয়ের সদস্য।
বালির ব্যবসায়ী হত্যা মামলার সঙ্গে যোগসূত্র
তদন্তের সময় আরও একটি বড় বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে যে ভিডিওতে দেখা যাওয়া দিব্যাংশ কুমার ওরফে অংশু, সেই যুবক যে রামাকান্ত যাদব হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত। দিব্যাংশের বিরুদ্ধে পাটনা জেলার বিভিন্ন থানায় গুরুতর অপরাধের মামলা দায়ের করা আছে। পুলিশের ধারণা এই ভিডিওর মাধ্যমে অভিযুক্তরা নিজেদের শক্তি ও ভয় দেখিয়ে লোকেদের আতঙ্কিত করতে চেয়েছিল। এই রিল কোনও ফিল্মি স্টান্টের চেয়ে বেশি একটি অপরাধী নেটওয়ার্কের প্রচার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া কি অপরাধীদের নতুন মঞ্চ?
এই ঘটনা আরও প্রমাণ করে যে কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল ব্যবহার এখন গুন্ডামি ও প্রভাব দেখানোর জন্য করা হচ্ছে। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মে ভয় ছড়ানোর জন্য ভিডিও বানানো এখন অপরাধীদের নতুন হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
পুলিশ তৈরি করেছে গ্রেফতারের রণনীতি
সিটি এসপি জানিয়েছেন যে বাকি অভিযুক্তদেরও শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। রানিতলাব থানা, পালিগঞ্জ পুলিশ এবং বিশেষ দল একসঙ্গে অভিযান চালিয়ে খুব শীঘ্রই সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করবে। পাশাপাশি, সাইবার সেলের সাহায্যে ভিডিও তৈরি, সম্পাদনা এবং আপলোড করার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিরও গভীর তদন্ত করা হচ্ছে। ভিডিওর ভিত্তিতে একটি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে অস্ত্র আইন, তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া মণীশ কুমারের বিরুদ্ধে এখন মোট ৫টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।