এক রাতেই শেষ! হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল একমাত্র ভরসা বাঁশের সেতু
শনিবার রাতের ঘুম যেন ভেঙে গেল একটানা আতঙ্কে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ক্যানিং ও জয়নগর সংযোগকারী একমাত্র বাঁশের সেতু। পিয়ালি নদীর জলে হারিয়ে গেল দুই থানাকে জুড়ে রাখা মানুষের নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তোলা সেতুটি। গোপালপুরের বধূকুলা এবং জয়নগরের তিলপি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের এই একমাত্র মাধ্যমটি ভেঙে পড়তেই কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল গোটা এলাকা।
নিজেরাই তুলে ছিলেন চাঁদা, প্রশাসনের নজরদারির বাইরে গ্রামীণ সংকল্প
বাস্তবতা আরও করুণ। দীর্ঘদিন ধরে কংক্রিটের সেতুর দাবি জানালেও মিলল না কোনও স্থায়ী সমাধান। বিধায়ক, সাংসদ, প্রশাসনের কাছে বারংবার জানানো সত্ত্বেও চোখ বুজে থেকেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি। ফলে নিজেরাই চাঁদা তুলে, হাতে বাঁশ নিয়ে তৈরি করেছিলেন একটি বড় সেতু—যা এতদিন ছিল দুই এলাকার মানুষের বেঁচে থাকার আশ্রয়। ছোট যানবাহন চললেও, সেই সেতু দিয়েই প্রতিদিন চলাফেরা করতেন হাজার হাজার মানুষ।
স্কুল, বাজার, যাতায়াত—সবই ভরসা ছিল এই সেতুর উপর
জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠেছিল বাঁশের সেতু।ক্যানিংয়ের গোপালপুর, হেড়োভাঙা, বধূকুলা এবং জয়নগরের তিলপি, মেরিগঞ্জ, ধোসা এলাকার মানুষের প্রতিদিনের রুটিন এই সেতুর সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল। স্কুলপড়ুয়ারা হোক বা বাজারে যাওয়া মহিলারা—সবাই ব্যবহার করতেন এই বাঁশের সেতু। কিন্তু হঠাৎ শনিবার রাতে তীব্র জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে সেই সেতুটি। এক লহমায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, মানুষ কার্যত বন্দি হয়ে পড়ে নিজ নিজ গ্রামে।
বিকল্প ব্যবস্থা: নৌকা চললেও ভোগান্তির শেষ নেই
রবিবার সকাল থেকেই তৎপরতা শুরু করে স্থানীয় পঞ্চায়েত।গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে নদী পারাপারের জন্য একটি নৌকা চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে বটে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যানবাহন তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষের যাতায়াতেই দেখা দিয়েছে তীব্র সমস্যা। যাঁদের যাতায়াতের প্রয়োজন বেশি, তাঁদের প্রায় ৭-৮ কিমি ঘুরপথে চলতে হচ্ছে, সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনই বেড়েছে খরচ।
“নিজেদের টাকায় তৈরি করেছিলাম”—ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা, দাবি দ্রুত কংক্রিটের সেতুর
ক্ষোভ চরমে স্থানীয় বাসিন্দাদের।বধূকুলার আমজাদ আলি মোল্লা জানান, বহুদিন ধরে প্রশাসনের কাছে কংক্রিটের সেতুর দাবি জানিয়ে এসেছি। কোনও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁশের সেতু বানিয়েছিলাম। এখন সেটাও নেই। প্রশাসন অবিলম্বে কংক্রিটের সেতু তৈরি করুক। মানুষের দুর্ভোগ আর যেন না বাড়ে।