প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ইইউ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা: বাণিজ্য, অর্থনৈতিক করিডোর এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে জোর

প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ইইউ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা: বাণিজ্য, অর্থনৈতিক করিডোর এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে জোর

প্রধানমন্ত্রী মোদী ইইউ নেতাদের উরসুলা ভন ডের লেইন এবং আন্তোনিও কোস্তার সাথে ফোনে কথা বলেছেন। ভারত-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের জন্য একটি বড় বার্তা।

ভারত-ইইউ আলোচনা: ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement-FTA) নিয়ে আলোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার এই দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইইউ চেয়ার উরসুলা ভন ডের লেইন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের (European Council) প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এই কলের ছবি বিশ্ব রাজনীতিতে (World Politics) আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিক কথোপকথন ছিল না, বরং ভারত এবং ইউরোপ একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে তারা এমন একটি বিশ্ব চায় যা নিয়মনীতি মেনে চলে, কোনও বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বাণিজ্যিক আচরণের উপর নয়।

ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির মধ্যে ভারত-ইউরোপের একতা

এই আলোচনার সময়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক নীতি (Tariff Policy) এবং বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বাণিজ্য নীতি (Disruptive Trade Policy) বিশ্ব বাণিজ্যের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা একসাথে এই বার্তা দিয়েছেন যে তারা এমন একটি বিশ্ব চায় যেখানে সার্বভৌমত্বের (sovereignty) প্রতি সম্মান জানানো হয় এবং সকল দেশ সমান নিয়ম মেনে চলে। এই কলের মাধ্যমে যে ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে, বিশ্লেষকরা তাকে আমেরিকার জন্য একটি "বড় বার্তা" হিসেবে দেখছেন।

আলোচনায় কি কি বিষয় উঠেছে

এই ফোনে আলোচনায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভারত-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়টি। উভয় পক্ষই এই চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর দিয়েছে যাতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী হয় এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসে। এছাড়াও, ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর (India-Middle East-Europe Economic Corridor) নিয়েও কথা হয়েছে, যা ভারত এবং ইউরোপের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করবে এবং এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বাণিজ্যিক পথ সহজ করবে।

শুধু তাই নয়, এই আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও কথা হয়েছে। ভারত ও ইউরোপ উভয়ই মনে করে যে ইউক্রেনে চলমান সংঘাত বন্ধ করার জন্য যুদ্ধবিরতি (ceasefire) এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। বিদেশ মন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও সম্প্রতি ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা-র সাথে কথা বলে এই দিকে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরেছেন।

আমেরিকার কেন উদ্বেগ

ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের নেতাদের মধ্যে এই ফোন কলের ছবি আমেরিকার জন্য একটি বড় ধাক্কার চেয়ে কম নয়। আসলে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর অনেক পণ্যের উপর ৫০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্তটি আমেরিকা-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ এবং ভারতের ক্রমবর্ধমান নৈকট্য এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারত এখন পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ককে ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য আমেরিকার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নয়। বিশ্ব রাজনীতিতে এই পরিবর্তন আমেরিকার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

ভারত-ইইউ সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব

ভারত এবং ইউরোপের মধ্যে সম্পর্ক কেবল বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উভয় পক্ষই বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার উপর অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রাখে। তা জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) হোক, ডিজিটাল অর্থনীতি (Digital Economy) হোক বা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, ভারত ও ইউরোপের অংশীদারিত্ব ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। এই কারণেই উভয় পক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব FTA চূড়ান্ত করতে চায় যাতে বাণিজ্যিক সহযোগিতা নতুন মাত্রা পায়।

ভারত হবে পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক

ফোনে আলোচনার সময় ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এই বিষয়েও একমত হয়েছেন যে পরবর্তী ভারত-ইইউ শীর্ষ সম্মেলন শীঘ্রই ভারতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সম্মেলনের জন্য ইইউ চেয়ার উরসুলা ভন ডের লেইন এবং আন্তোনিও কোস্তাকে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। এই শীর্ষ সম্মেলনটি ভারত-ইউরোপ সম্পর্কের জন্য ঐতিহাসিক বলে বিবেচিত হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর বার্তা

আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে এই কথোপকথনকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি লিখেছেন যে এই আলোচনা ভারত-ইউরোপ সম্পর্ককে নতুন দিক দেবে এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

Leave a comment