মালদ্বীপে প্রধানমন্ত্রী মোদী: রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর উষ্ণ অভ্যর্থনা ও বিশেষ সম্মান

মালদ্বীপে প্রধানমন্ত্রী মোদী: রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর উষ্ণ অভ্যর্থনা ও বিশেষ সম্মান

ব্রিটেন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মালদ্বীপ পৌঁছেছেন। মালে বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি মুইজ্জু তাঁকে আলিঙ্গন করে স্বাগত জানান। পুরো মন্ত্রিসভা সেখানে উপস্থিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি।

PM Modi Maldives Visit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিটেন সফর শেষে সরাসরি মালদ্বীপের রাজধানী মালে যান। শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদী মালে পৌঁছানোর সাথে সাথেই সেখানকার পরিবেশ খুবই বিশেষ হয়ে ওঠে। মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতির পুরো মন্ত্রিসভা এই ঐতিহাসিক আগমনের সাক্ষী হতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর আলিঙ্গন করে স্বাগত

বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সাথে সাথেই রাষ্ট্রপতি মুইজ্জু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে উষ্ণ সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে আলিঙ্গন করে স্বাগত জানান। এই দৃশ্য ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে গভীর এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের প্রমাণ দেয়। এই সময় মালে বিমানবন্দরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুরো মন্ত্রিসভা ছিল উপস্থিত, দেওয়া হল বিশেষ সম্মান

প্রধানমন্ত্রী মোদীর অভ্যর্থনায় রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর পুরো মন্ত্রিসভার একসাথে উপস্থিতি এই বিষয়টির প্রতীক যে মালদ্বীপ ভারতের সাথে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেয়। সাধারণত কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের আগমনে কিছু নির্বাচিত মন্ত্রী অভ্যর্থনা জানাতে আসেন, কিন্তু এইবারের দৃশ্য ছিল অসাধারণ। এর থেকে এই বার্তা স্পষ্ট হয়েছে যে ভারত ও মালদ্বীপের সম্পর্ক রাজনৈতিক সীমানা ছাড়িয়ে একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক অংশীদারিত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ আমন্ত্রণ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফর কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, বরং প্রতীকীও। তিনি রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে মালদ্বীপ পৌঁছেছেন। মালদ্বীপ এ বছর তাদের স্বাধীনতার ৬০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে এবং এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রধান অতিথি (Chief Guest) হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই আমন্ত্রণ এই বিষয়ের প্রমাণ যে মালদ্বীপ ভারতকে একটি বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করে।

ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কের ৬০ বছর

মালদ্বীপের স্বাধীনতার ৬০ বছর পূর্তির সাথে সাথে ভারত ও মালদ্বীপের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও ৬০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। উভয় দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতি এই বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

কৌশলগত এবং সামুদ্রিক অংশীদারিত্বের তাৎপর্য

ভারত ও মালদ্বীপের সম্পর্ক কেবল সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক নয়, বরং এর বিস্তার কৌশলগত (strategic) এবং সমুদ্র সুরক্ষা ক্ষেত্রেও রয়েছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (Indian Ocean Region) ভারতের নিরাপত্তা নীতিতে মালদ্বীপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষা, সমুদ্র নজরদারি, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রগুলোতে অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আলোচনায় চীনের প্রভাবের পটভূমিও

মালদ্বীপের বিদেশ নীতিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ভূমিকা বৃদ্ধির কারণে ভারতকে অনেকবার সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফর এবং রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর এই স্তরের আতিথেয়তা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ভারত-মালদ্বীপের সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এবং দৃঢ়তা বজায় রয়েছে। এই সফর ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট এবং নেবারহুড ফার্স্ট নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়েও হবে আলোচনা

সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এর মধ্যে কানেক্টিভিটি প্রোজেক্ট, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, পর্যটন, সবুজ শক্তি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রধান। এছাড়াও, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে।

Leave a comment