প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া অভিভাবকদের জন্য ‘ডিজিটাল স্বাক্ষর’ ব্যবস্থা এক ক্লিকে মিলবে উপস্থিতি মূল্যায়ন ও সামাজিক বার্তা!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া অভিভাবকদের জন্য ‘ডিজিটাল স্বাক্ষর’ ব্যবস্থা এক ক্লিকে মিলবে উপস্থিতি মূল্যায়ন ও সামাজিক বার্তা!

বেলডাঙার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল পদক্ষেপ—শুরু হল আধুনিক উপস্থিতি পদ্ধতি

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার আন্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবার শিক্ষা ব্যবস্থায় এক অনন্য নজির গড়ল। চালু করল এমন এক ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম, যা শুধুমাত্র সময়মত হাজিরা রেকর্ড করে না, বরং শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বা ছুটির খবর পৌঁছে দিচ্ছে সরাসরি অভিভাবকের মোবাইলে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী স্কুলে ঢুকতেই বা ছুটি হতেই ‘টিং’ করে ফোনে চলে আসছে মেসেজ! এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে চোখের স্ক্যান এবং বায়োমেট্রিক আই-কার্ড প্রযুক্তি। এখন থেকে আর খাতায় কলমে হাজিরার দিন শেষ—এ যেন ডিজিটাল যুগে শিক্ষার নতুন ভাষ্য।

শুধু উপস্থিতি নয়, শিক্ষকও পাঠাবেন অ্যাপে বার্তা, মূল্যায়ন রিপোর্ট—সুবিধায় অভিভাবক

স্কুল আর শুধু পাঠশালা নয়, এবার যোগাযোগের এক ডিজিটাল কেন্দ্র হয়ে উঠছে। শিক্ষকরা এখন থেকে ছুটি সংক্রান্ত বার্তা, বার্ষিক মূল্যায়নের রিপোর্ট কিংবা বিশেষ দিবসের নোটিস—সব কিছুই পাঠাতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যমে। অভিভাবকদের আর আলাদা করে খাতা দেখে কিংবা স্কুলে গিয়ে জানার প্রয়োজন পড়বে না। ডিজিটাল মিডিয়ায় যখন গোটা দেশ এগোচ্ছে, তখন এমন উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রকে আরও স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী করে তুলবে বলেই মনে করছেন শিক্ষক-অভিভাবকরা।

ডিজিটাল আই-কার্ডে শুধু পরিচয় নয়, থাকছে সমাজ সচেতনতার বার্তাও—শিক্ষা এবার শুধু বইয়ের গণ্ডিতে নয়

প্রচলিত আই-কার্ডের চেহারায় বদল ঘটেছে সম্পূর্ণভাবে। আন্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল আই-কার্ডে জায়গা পেয়েছে শিশুদের পরিচয়ের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তাবলী। যেমন—"স্টপ চাইল্ড ম্যারেজ", "সেভ ওয়াটার", "মিশন নির্মল বাংলা", "সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ" ইত্যাদি। ছোটদের হাতে থাকা এই বার্তাবাহী পরিচয়পত্র যেন পরিবারে, সমাজে সচেতনতার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে, এমনটাই আশা শিক্ষকদের। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে সামাজিক শিক্ষাও তুলে ধরছে এই স্কুল।

পুরস্কার বিতরণীর দিনেই প্রযুক্তি ছোঁয়ার শুভসূচনা—উদ্যোগে থাকছে বেসরকারি সংস্থার সহায়তা

বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের দিনেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে এই অভিনব প্রকল্পের। ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স এবং আই-কার্ড ব্যবস্থার জন্য সহায়তা দিয়েছে এক বেসরকারি প্রযুক্তি সংস্থা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, “এই প্রকল্প শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটা শিক্ষার এক বিকাশধর্মী পদক্ষেপ। শিশুর নিরাপত্তা, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগসূত্র এবং সামাজিক বার্তা—সব কিছুর সম্মিলনে এই উদ্যোগ।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, অভিভাবক এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

গ্রামের স্কুলেই প্রযুক্তির বিপ্লব—অন্য স্কুলগুলির কাছে উদাহরণ হয়ে উঠছে আন্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়

গ্রামবাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এখনও অনেকটাই পিছিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারে। কিন্তু বেলডাঙার এই স্কুল দেখিয়ে দিল, ইচ্ছা থাকলে প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স, আই-কার্ড, অভিভাবক সংযোগ ব্যবস্থা চালু করে আন্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ জেলার অন্যান্য স্কুলগুলির কাছে হয়ে উঠেছে অনুপ্রেরণা। এমন উদাহরণ যদি আরও স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে শিক্ষার মানোন্নয়ন তো হবেই, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের মধ্যে গড়ে উঠবে বিশ্বাসের সুতো।

প্রযুক্তি যেখানে হাতছানি দেয় ভবিষ্যতের—সেই পথে হেঁটেই শিক্ষার নতুন দিগন্তে পা দিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়

আজকের দিনে প্রযুক্তি ছাড়া সমাজ অচল। সেই প্রযুক্তিকে যদি ব্যবহার করা যায় শিক্ষার উন্নতিতে, তবেই গড়ে উঠবে আগামী প্রজন্ম। আন্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ডিজিটাল উদ্যোগ সেই দিকেই এক সাহসী পদক্ষেপ। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক তিন পক্ষই উপকৃত, সমাজও পায় সচেতনতার নতুন বার্তা। ছোট স্কুলের এই ‘বড়’ পদক্ষেপ আজ রাজ্যজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

Leave a comment