বেইজিংয়ে পুতিন-কিম বৈঠক: ইউক্রেন যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা

বেইজিংয়ে পুতিন-কিম বৈঠক: ইউক্রেন যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা

বেইজিংয়ে কিম জং উন ও পুতিনের সাক্ষাৎ। দুই নেতা ইউক্রেন যুদ্ধ, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। কিম রাশিয়াকে সর্বাত্মক সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বেইজিং: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বুধবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের সময়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষে, দুই নেতা শীতল যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে একসাথে সময় কাটান।

কিম জং উন এবং পুতিন এই বৈঠকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। এই সময়ে দুই নেতা একে অপরের প্রতি আস্থা ও সমর্থন ব্যক্ত করেন।

কিম জং উন পুতিনকে পূর্ণ সমর্থন জানান

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় কিম জং উন পুতিনকে আশ্বাস দেন যে উত্তর কোরিয়া সকল প্রকারভাবে রাশিয়াকে সমর্থন করবে। কিম বলেন, "যদি আমি আপনার এবং রাশিয়ান জনগণের জন্য কিছু করতে পারি বা করা উচিত বলে মনে করি, তবে আমি ভাই হিসেবে আমার কর্তব্য বলে মনে করব।"

পুতিন কিমের এই আশ্বাসে অত্যন্ত খুশি হন এবং তাকে রাশিয়ান ভাষায় 'প্রিয় স্টেট অ্যাফেয়ার্স চেয়ারম্যান' (Dear Chairman of State Affairs) বলে সম্বোধন করেন। পুতিন কিমকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং দুই নেতা তাদের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার ওপর জোর দেন।

প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং ইউক্রেনে সহযোগিতা

রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ২০২৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে। পুতিন এই চুক্তির প্রশংসা করে বলেন যে দুই দেশের সম্পর্ক বিশেষ, বিশ্বস্ত এবং সহযোগিতামূলক রয়ে গেছে। তিনি উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের সাহসিকতারও প্রশংসা করেন।

পুতিন উল্লেখ করেন যে এই বছরের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল কুরস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বিতাড়িত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, "আমরা আপনাদের সৈন্যদের এবং তাদের পরিবারের আত্মত্যাগ কখনো ভুলব না।"

চীনে সামরিক কুচকাওয়াজ এবং শীর্ষ সম্মেলন

এই বৈঠকের আগে পুতিন এবং কিম চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে যুদ্ধ বার্ষিকীর উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন। এটি চীনের এখন পর্যন্ত আয়োজিত সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজ বলে মনে করা হচ্ছে। এই কুচকাওয়াজে তিন নেতার উপস্থিতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে।

এই কুচকাওয়াজ এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং চীনের মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার দিকনির্দেশনা স্পষ্ট করেছে। কিম জং উনের এটি মহামারী পরবর্তী প্রথম চীন সফর।

কিমের চীন সফর

উত্তর কোরিয়ার জন্য এই চীন সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কিম জং উন বিশ্ব থেকে অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। এই সফরের সময় তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং দুই ডজনেরও বেশি জাতীয় নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক গভীর হয়েছে

পুতিন এবং কিম বৈঠকে দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন। পুতিন বলেন যে সম্প্রতি রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক বিশেষ এবং বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছে। তিনি রাশিয়ায় নিয়োজিত উত্তর কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্সের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে তাদের সৈন্যরা সাহস ও বীরত্বের সাথে লড়াই করেছে।

Leave a comment