খাবারের টেবিলে চিরন্তন প্রশ্ন :রাতে ভাত খাবেন নাকি রুটি—এই প্রশ্ন প্রায় প্রতিদিনের পারিবারিক আলোচনার বিষয়। কারও কাছে ভাত না হলে খাবার অপূর্ণ, আবার কেউ রাতে হালকা খাবার হিসেবে রুটি খেতে বেশি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিক থেকে কোন খাবারটি বেশি উপকারী? উত্তর খুঁজলেন বিশেষজ্ঞরা।
ভাতে কী কী পুষ্টি লুকিয়ে আছে
ভাত শুধু কার্বোহাইড্রেটের উৎস নয়, বরং এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, আয়রন ও ফাইবার। ফলে প্রতিদিন ভাত খেলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় না। অনেকেই ধারণা করেন ভাত খেলে ওজন দ্রুত বাড়ে, কিন্তু সঠিক পরিমাণ মেপে খেলে ভাত শরীরের শক্তি জোগাতে অপরিহার্য।
রুটির গুণাগুণ কতটা ভিন্ন
আটার রুটি শুধু কার্বস নয়, সঙ্গে ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, আয়রন ও সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করে। বিশেষত আটার রুটিতে ফাইবারের পরিমাণ ভাতের চেয়ে বেশি, যা হজমে সাহায্য করে ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষদের জন্য রুটি বিশেষ উপকারী।
ডায়াবিটিসে কোন খাবার নিরাপদ
ডায়াবিটিস রোগীরা সাধারণত রুটিকে নিরাপদ বলে মনে করেন। তবে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাই আসল বিষয়। ভাতও ডায়াবিটিসে একেবারে বর্জনীয় নয়, মেপে খেলেই চলবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, দানাশস্য বা আটা, বাজরা, রাগির রুটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাতের চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে।
রাতে আসলে কোনটা খাবেন
ভাত ও রুটিতে প্রায় সমপরিমাণ ক্যালোরি থাকলেও ফাইবার ও পুষ্টির দিক থেকে রুটি খানিকটা এগিয়ে। তবে রাতে ভাত খেলে শরীরে আলাদা ক্ষতি হয় না। ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, অভ্যাস ও স্বাচ্ছন্দ্যের উপর নির্ভর করে রাতের খাবার নির্বাচন করা উচিত। হজমে সমস্যা থাকলে রুটি ভালো, আবার সহজপাচ্যতার জন্য ভাতও খাওয়া যায়।
ওজন কমাতে চাইলে কী খাওয়া উচিত
ওজন কমাতে আগ্রহীরা মনে করেন ভাত খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু গবেষণা বলছে—সীমিত পরিমাণ ভাত খেলে ওজন বাড়ে না। বরং ময়দার তৈরি রুটি খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। গ্লুটেনে অ্যালার্জি থাকলে রুটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে, সেই ক্ষেত্রে ভাতই নিরাপদ বিকল্প।
ভাত ও রুটি উভয়ই শরীরের জন্য উপকারী। তবে ডায়াবিটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে রুটি খানিকটা বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। আর যাঁদের কোনও অসুবিধা নেই, তাঁরা যেটি খেতে ভালোবাসেন সেটিই রাতে বেছে নিতে পারেন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে মূল মন্ত্র—সব কিছু মেপে, সচেতনভাবে খাওয়া।