রাজস্থানে পারিবারিক বিবাদের জেরে একই পরিবারের ৪ জনের আত্মহত্যা

রাজস্থানে পারিবারিক বিবাদের জেরে একই পরিবারের ৪ জনের আত্মহত্যা

রাজস্থানের বারমের জেলার একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা সামনে এসেছে। শিব থানা এলাকার উন্ডু গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই পরিবারের চারজন সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী শিবলাল, তার স্ত্রী কবিতা (৩২ বছর) এবং দুই শিশু সন্তান (৮ ও ৬ বছর)। চারজনেরই মৃতদেহ গ্রামেরই একটি জলের ট্যাঙ্কে পাওয়া গেছে, যা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

আত্মহত্যার কারণ পারিবারিক বিবাদ

এই দুঃখজনক ঘটনার পিছনে বাড়ির নির্মাণ নিয়ে চলা পারিবারিক বিবাদকে দায়ী করা হচ্ছে। মৃত শিবলাল জয়পুরে হস্তশিল্পের কাজ করতেন এবং শিশুদের ভর্তির জন্য সম্প্রতি গ্রামে ফিরে এসেছিলেন। খবর অনুযায়ী, শিবলাল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে নিজের নামে একটি আলাদা বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্য, বিশেষ করে তার মা এবং ছোট ভাই, এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

শিবলালের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অভিযোগ করেছেন যে মানসিক চাপ এবং পারিবারিক কলহের কারণে শিবলাল এই ভয়ানক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এমনকি, ২৯শে জুন তারিখে শিবলাল একটি সুইসাইড নোটও লিখেছিলেন, কিন্তু সেদিন আত্মহত্যা করেননি। মঙ্গলবার, যখন বাড়িতে শিবলাল, তার স্ত্রী এবং শিশুরা ছিলেন, তখন তারা জলের ট্যাঙ্কে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

বন্ধ ফোন এবং খোলা ট্যাঙ্ক, এইগুলিই সূত্র

মঙ্গলবার শিবলাল এবং তার স্ত্রী তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ছোট ভাই অনেকবার ফোন করার পরেও যখন কোনো উত্তর পাননি, তখন তিনি এক প্রতিবেশীকে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখতে বলেন। প্রতিবেশী গিয়ে দেখেন বাড়ির দরজা বন্ধ, কিন্তু কাছেই থাকা জলের ট্যাঙ্কের ঢাকনা খোলা ছিল। ট্যাঙ্কের ভেতর উঁকি মেরে দেখা যায়, চারজনের মৃতদেহ ভাসছে। এরপরই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

শিব থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে। মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য ভিয়াড়-এর কমিউনিটি হেলথ সেন্টার (সিএইচসি)-এর মর্গে পাঠানো হয়েছে। যদিও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে রাতেই খবর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা দেরিতে পৌঁছানোয় মৃতদেহগুলি সারা রাত ট্যাঙ্কটিতেই ছিল।

সুইসাইড নোট থেকে রহস্যের উন্মোচন

বারমেরের এসপি নরেন্দ্র সিং মীনা জানিয়েছেন, মৃত শিবলালের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে পারিবারিক চাপকে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুইসাইড নোটে লেখা ছিল যে তাকে বাড়ি তৈরি করতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল এবং বাড়ির পরিবেশ নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন।

শ্বশুরবাড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ শিবলালের ছোট ভাই ও মায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেছে। বর্তমানে পুলিশ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করছে। এছাড়াও পুলিশ তদন্ত করছে যে আত্মহত্যার অন্য কোনো কারণ ছিল কিনা।

গ্রামে শোকের ছায়া

ঘটনার পর উন্ডু গ্রামে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। একসঙ্গে চারজনের মৃতদেহের শেষকৃত্যের জন্য বিপুল সংখ্যক গ্রামবাসী জড়ো হয়েছিলেন। পুলিশ পরিবারের সদস্যদের বয়ান রেকর্ড করেছে এবং সুইসাইড নোটের তদন্তের পাশাপাশি পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

এই ঘটনা আবারও পারিবারিক চাপ এবং কলহের ভয়াবহতা প্রকাশ করে। পুলিশের বক্তব্য, খুব শীঘ্রই দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং সত্য উদ্ঘাটন করা হবে।

Leave a comment