রথযাত্রার শুভ লগ্ন জানুন আগেভাগে, মহা উৎসবে মাতবে সমগ্র ভারত

রথযাত্রার শুভ লগ্ন জানুন আগেভাগে, মহা উৎসবে মাতবে সমগ্র ভারত
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে যে রথযাত্রা পালিত হয়, তা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়—বরং এক অতুলনীয় আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। এই দিন ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে মাসির বাড়ি যাত্রা করেন জগন্নাথদেব, আর সেই উপলক্ষে গোটা ভারত যেন এক মহোৎসবে রূপ নেয়। ওড়িশার পুরী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মাহেশ, ময়দান পর্যন্ত—প্রতিটি মন্দির ও বনেদি বাড়িতে একযোগে বাজে শঙ্খধ্বনি, ফুলে ভরে ওঠে দেবতার রথ।

পুরাণকথার মোড়কে ঘেরা রথযাত্রার মহিমা, দেবতার গৃহত্যাগের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

এই উৎসবের শিকড় পুরাণে প্রোথিত। স্নানযাত্রার পর দেবতা যখন নিভৃতবাসে চলে যান, তখন তাঁর ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই দিনের জন্য—যেদিন তিনি আবার জনসমক্ষে আসবেন। বলা হয়, জগন্নাথদেব রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে মাসির বাড়ি যান। সেই যাত্রার অনুরণনই ধ্বনিত হয় প্রতিটি কাঠের চাকায়। এই পথচলায় দেব-দেবীর সহচররাও তাঁর সঙ্গী হন। অনেকে বলেন, এ যেন কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের আত্মিক প্রতিচ্ছবি।

মোক্ষের আশায় রথের দড়ি টানেন লক্ষ ভক্ত, গ্রামীণ বাংলায় বাজে ঢাক-ঢোল

রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ভারতজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় করেন জগন্নাথের দর্শনে। বিশ্বাস, এই যাত্রায় শুদ্ধচিত্তে অংশগ্রহণ করলে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি মেলে। শুধু শহর নয়, গ্রামবাংলার মানুষও এই দিনটিকে ঘটা করে পালন করে। কোথাও মেলা, কোথাও যাত্রাপালা, কোথাও আবার হয় ধর্মীয় শোভাযাত্রা। বনেদি বাড়িতে হয় দেবতার বিশেষ আরাধনা, অনেকে আবার অন্নদান করেন এই তিথিতে।

পুরীর রথযাত্রার নির্দিষ্ট সময়, জেনে নিন কোন লগ্নে দর্শন শ্রেষ্ঠ

পুরীর ঐতিহাসিক রথযাত্রা এবার শুরু হচ্ছে ২৭ জুন থেকে এবং চলবে ৫ জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয়া তিথি শুরু হবে ২৬ জুন দুপুর ২:৩৯ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭ জুন দুপুর ১:১৮ মিনিটে। এই সময়েই রথে আরোহন করে দেবতা বের হন পথে। এই লগ্নে পুরীর জগন্নাথ মন্দির চত্বর হয়ে ওঠে আধ্যাত্মিক কেন্দ্র, যেখানে মানুষের ঢল নামে—তাদের চোখে একটাই আশার আলো, দেবতার এক ঝলক দর্শন।

মহেন্দ্র ও অমৃত যোগে শ্রীবিগ্রহ দর্শনে বাড়বে পুণ্য, জেনে নিন কখন করবেন পুজো

রথযাত্রার দিনটি এবার আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে কারণ এই দিনে পড়ছে একাধিক শুভ যোগ। মহেন্দ্রযোগ থাকবে সকাল ৫:৫৬ থেকে, অমৃতযোগ আবার সকাল ১২:০৯ থেকে রাত ১২:৪৬ পর্যন্ত একাধিক পালায়। এই সময় দেবতাকে দর্শন করা ও পুজো দেওয়া ভক্তের জীবনে অসীম শুভফল বয়ে আনতে পারে বলে জানাচ্ছেন পুরোহিত সমাজ।

স্নানপূর্ণিমা থেকে শুরু প্রস্তুতি, গুন্ডিচা মন্দিরে চলছে পরিষ্কারের কাজ

রথযাত্রার প্রস্তুতি কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে আগেই। ১২ জুন পালিত হয়েছে স্নানপূর্ণিমা, তার পর দেবতারা গেছেন অনবসরে। বিশ্রামের এই সময়কাল ২৬ জুন পর্যন্ত। ওই দিনই গুন্ডিচা মন্দির পরিষ্কার করে রথযাত্রার প্রস্তুতির শেষ পর্যায় সম্পন্ন হবে। এই মন্দিরকেই দেবতার মাসির বাড়ি হিসেবে মানা হয় এবং এখানে গিয়েই দেবতা থাকেন কয়েকদিন।

এক রথে নয়, উৎসব টানা নয় দিন, জেনে নিন দিনক্ষণভিত্তিক সূচি

২৭ জুন শুরু হবে রথযাত্রা। এরপর ১ জুলাই হের পঞ্চমী, ৪ জুলাই বহুদা যাত্রা (দেবতার ফিরতি যাত্রা) এবং ৫ জুলাই পালিত হবে সোনার সাজে সজ্জিত সুনা বেসা ও নীলাদ্রি বিজয়া। এই নয় দিন প্রতিদিনই রয়েছে বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান, আর রয়েছে বিশাল ভক্তসমাগম। এই নয়দিন জুড়ে পুরী পরিণত হয় এক চলন্ত স্বর্গে।

Leave a comment