বিহারের আরজেডি বিধায়ক ভাই বীরেন্দ্র এবং পঞ্চায়েত সচিবের মধ্যে হুমকি-ধমকি পূর্ণ কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়েছে। সচিব বিধায়ককে সংযম ও শালীনতার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন।
আরজেডি বিধায়কের বিতর্ক: বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর বর্ষীয়ান বিধায়ক ভাই বীরেন্দ্র আবারও বিতর্কে জড়িয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাঁকে মানরের এক পঞ্চায়েত সচিবের সঙ্গে কথা বলার সময় হুমকি-ধমকি দিতে শোনা যাচ্ছে। পুরো বিতর্কটি একজন ব্যক্তির মৃত্যু শংসাপত্র নিয়ে, যা তৈরি করার জন্য বিধায়ক পঞ্চায়েত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
যখন সচিব পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন
অডিও ক্লিপ অনুসারে, বিধায়ক যখন পঞ্চায়েত সচিবকে ফোন করেন, তখন সচিব তাঁকে চিনতে পারেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ভাই বীরেন্দ্র নিজেকে মানরের বিধায়ক পরিচয় দিয়ে রাগের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন। এমনকি তিনি বলেন, "জুতা দিয়ে টেনে মারব"। কথোপকথনে এও শোনা যায় যে বিধায়ক বলেছেন, "তুমি প্রোটোকল মানো না, পুরো দেশ ভাই বীরেন্দ্রকে চেনে আর তুমি জিজ্ঞাসা করছ কে?"
সচিবের সংযত এবং স্পষ্ট জবাব
যেখানে বিধায়কের স্বর বেশ আক্রমণাত্মক ছিল, সেখানে পঞ্চায়েত সচিব সংযম ও আত্মসম্মানের সঙ্গে জবাব দিয়েছেন। সচিব বলেন যে "আপনি প্রেমের সঙ্গে কথা বললে আমরাও সম্মানের সঙ্গে কথা বলব"। পাশাপাশি তিনি বিধায়ককে স্পষ্ট করে বলেন যে "হুমকি-ধমকি দিয়ে কিছুই হবে না"। সচিব আরও বলেন যে যদি বদলি করতে হয়, তাহলে তিনি লিখিত দিতে প্রস্তুত।
কথোপকথনের সম্পূর্ণ সারসংক্ষেপ
ভাইরাল অডিওতে ভাই বীরেন্দ্রের কল দিয়ে শুরু হয়। তিনি পঞ্চায়েত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নিজের পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, "তুমি ভাই বীরেন্দ্রকে চেনো না?" সচিবের জবাব ছিল "আপনি পরিচয় দিলে তবেই তো চিনব"। এরপর বিধায়ক রেগে যান এবং বলেন, "আমি মানরের বিধায়ক, তুমি জানো না?"
কথোপকথনে রাগের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং বিধায়ক বলেন, "কি তুমি ইংল্যান্ড থেকে এসেছ নাকি? মানরের বিধায়ককে চেনো না? জুতা দিয়ে টেনে মারব। যা করার করো, কেস করো বা অন্য কিছু।"
সচিব তখনও ভদ্রতা বজায় রাখেন এবং বলেন, "বলুন কী কাজ? প্রণামও তো করতে হয় আমাকে।" বিধায়ক জবাবে জানান যে রিঙ্কি দেবীর স্বামী অবিনাশ কুমারের মৃত্যু শংসাপত্র তৈরি করতে হবে এবং কাজ সরাসরি করো, বাঁদরামি দেখিয়ো না।
সচিব আবার বলেন যে "আপনি জনপ্রতিনিধি, তাই আপনার কাছে আশা করা হয় যে আপনি প্রেমपूर्वक কথা বলবেন"। এতে বিধায়ক রেগে গিয়ে বলেন, "তুমি আমাকে কীভাবে চেনো না? যখন নিজের ক্ষেত্রের বিধায়ককে জানো না, তখন চাকরি করার অধিকারও নেই।" সচিব আবারও স্পষ্ট করে বলেন, "আপনি লিখিত দিন, আমি বদলির জন্য প্রস্তুত।"
রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ও প্রতিক্রিয়া
এই অডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিহারের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। একদিকে বিরোধীরা এটিকে জনপ্রতিনিধিদের স্বৈরাচারী মানসিকতা বলছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। সচিবের পক্ষ থেকে দেওয়া শান্ত কিন্তু কঠোর প্রতিক্রিয়াকে অনেকেই প্রশংসার চোখে দেখছেন।
মৃত্যু শংসাপত্রের বিষয়টি কী
এই পুরো বিতর্কের মূলে রয়েছে একটি মৃত্যু শংসাপত্রের বিষয়। বলা হচ্ছে যে রিঙ্কি দেবীর স্বামী অবিনাশ কুমারের মৃত্যু শংসাপত্র পঞ্চায়েত অফিস থেকে তৈরি করার কথা ছিল, যার জন্য আবেদন আগেই করা হয়েছে। বিধায়ক সচিবের কাছে এই কাজে দেরি হওয়ার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যদিও সচিবের বক্তব্য ছিল যে প্রক্রিয়া চলছে এবং শংসাপত্র তৈরি হয়ে গেলেই জানানো হবে।