তাঁর গলায় স্টেথোস্কোপ থাকলেও, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন! চিকিৎসক ও তৃণমূল নেতা ডঃ শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, বিদেশি ভুয়ো মেডিক্যাল ডিগ্রি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর রেজিস্ট্রেশন ২ বছরের জন্য স্থগিত করল পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল। জনস্বাস্থ্য নিয়ে এমন প্রতারণা সামনে আসতেই বিস্মিত চিকিৎসা মহল।
দোষ স্বীকার না করলেও রক্ষা মেলেনি! মেডিক্যাল কাউন্সিলের কড়া রায় ঘোষিত
বৃহস্পতিবার তাঁকে সশরীরে তলব করেছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল। যদিও শান্তনু নিজের অবস্থান থেকে সরেননি, বরং ডিগ্রির ব্যাখ্যা দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেন। কিন্তু পর্যালোচনায় উঠে আসে যথেষ্ট প্রমাণ, যেগুলির ভিত্তিতে তাঁকে ‘দোষী’ ঘোষণা করে রেজিস্ট্রেশন সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেয় কাউন্সিল। এর ফলে ২০২৫ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তিনি আইনি চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারবেন না।
এফআরসিপি' নাকি সম্মানসূচক সনদ? শান্তনুর ব্যাখ্যা ঘিরে বিভ্রান্তি
যে বিদেশি ডিগ্রিকে ঘিরে এই বিতর্ক, সেটি নিয়ে নিজে মুখ খুলেছেন শান্তনু সেন। তাঁর দাবি, 'এফআরসিপি' ডিগ্রি হল একটি ‘অনারারি’ অর্থাৎ সম্মানসূচক স্বীকৃতি, যার জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কাউন্সিলের বক্তব্য, কোনও আন্তর্জাতিক সনদ দেশে চিকিৎসা করার বৈধতা দেয় না, যদি না তা এমসিআই বা মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া অনুমোদিত হয়। তাই শান্তনুর ব্যাখ্যা কাউন্সিলের চোখে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
ভুয়ো চিকিৎসা! রোগীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছিলেন?
চিকিৎসক হিসেবে তাঁর পরিচিতি থাকলেও, বাস্তবে কি তিনি ছিলেন একজন ‘ভুয়ো ডাক্তার’? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় জানান, বহুদিন ধরে তিনি বিদেশি সনদের সাহায্যে চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন, অথচ রাজ্য কাউন্সিলের কাছে সেই তথ্য গোপন রেখেছিলেন। তদন্তে মিলেছে এমন বেশ কিছু প্রমাণ, যা এই অভিযোগকে বাস্তব বলে প্রমাণ করে।
রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া, বিভ্রান্ত তৃণমূলের অন্দরমহল
ঘটনার খবর সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য রাজনীতি। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে—তৃণমূল কিভাবে একজন ভুয়ো ডিগ্রিধারীকে নিজেদের শীর্ষ নেতৃত্বে জায়গা দিয়েছে? যদিও দল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনা শান্তনু সেনের ব্যক্তি জীবন তো বটেই, দলীয় ভাবমূর্তিরও বড়সড় ক্ষতি করতে পারে।
ফের চিকিৎসায় ফিরতে কঠিন পরীক্ষা, নজরে শান্তনুর অতীত রেকর্ড
কেবলমাত্র ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা নয়, পরবর্তীতে চিকিৎসায় ফিরতেও পড়তে হবে কঠোর নিয়মের মুখে। মেডিক্যাল কাউন্সিল জানিয়েছে, শান্তনুর পুরনো রেকর্ড, রেজিস্ট্রেশন সময়কাল, তাঁর ব্যবহৃত যাবতীয় কাগজপত্র পুনরায় যাচাই করা হবে। এমনকি যদি ভবিষ্যতে আরও অসঙ্গতি ধরা পড়ে, তাহলে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হতে পারে চিকিৎসার অধিকার।