আজ থেকে শেয়ার বাজারে পাঁচ দিন ধরে একটানা অস্থিরতা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ২৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই সপ্তাহটি অভ্যন্তরীণ এবং বিশ্বব্যাপী ঘটনাবলীর কারণে উত্থান-পতনে পূর্ণ হতে পারে। গত সপ্তাহে সেনসেক্স প্রায় ২৯৪ পয়েন্ট পড়েছিল এবং নিফটিও ১৩১ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছিল। এখন এই সপ্তাহের শুরুটা বেশ কয়েকটি বড় সংকেত দিয়ে হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে কোম্পানিগুলির Q1 ফলাফল, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নিয়ে বৈঠক এবং ট্রাম্প শুল্ক সম্পর্কিত সময়সীমা।
প্রথম ত্রৈমাসিকের ফলাফলের দিকে সবার নজর
কিছু বড় কোম্পানির ত্রৈমাসিক ফলাফলের উপর বাজারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে। এই সপ্তাহে ইন্ডাসইন্ড ব্যাংক, এশিয়ান পेंट्स, এনটিপিসি, টাটা স্টিল, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, মারুতি সুজুকি, সান ফার্মা এবং আইটিসি-র মতো সংস্থাগুলি তাদের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের ফলাফল প্রকাশ করবে। বিনিয়োগকারীদের নজর এই ফলাফলগুলির দিকে থাকবে, কারণ এই সংস্থাগুলির পারফরম্যান্সের উপরেই বাজারের গতিবিধি নির্ধারিত হতে পারে।
আমেরিকার ফেড সিদ্ধান্ত এবং জিডিপি ডেটার দিকেও নজর থাকবে
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের নজর আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের দিকে থাকবে, যেখানে সুদের হার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত কয়েক মাসে ফেড হার স্থিতিশীল রেখেছিল, তবে মুদ্রাস্ফীতির ডেটাতে ওঠানামার কারণে বাজারে আবারও হারের পরিবর্তনের আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়াও, এই সপ্তাহে আমেরিকার জিডিপি ডেটাও প্রকাশিত হবে, যা সারা বিশ্বের বাজারের দিকনির্দেশ করতে পারে।
১ আগস্টের দিকে সবার চোখ
১ আগস্ট তারিখটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই দিন আমেরিকা কর্তৃক আরোপিত ট্রাম্প শুল্কের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই শুল্ক ভারত সহ অনেক দেশের উপর প্রযোজ্য ছিল, যা ২০২০ সালে আংশিকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। এখন এই শুল্ক নিয়ে আমেরিকার পরবর্তী কৌশল কী হয়, সেদিকে বিনিয়োগকারীদের নজর থাকবে। এর পাশাপাশি থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও বাজারের গতিবিধির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
অটো বিক্রি এবং IIP ডেটাও বাজারকে দিশা দেবে
নতুন মাসের শুরুতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন অর্থাৎ IIP এবং ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই-এর মতো প্রধান অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশ করা হবে। এর সাথে জুলাই মাসের অটো বিক্রির পরিসংখ্যানও সামনে আসবে। এই সমস্ত ডেটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে বা ভেঙে দিতে পারে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কী করবে, সবার নজর
এফআইআই অর্থাৎ বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কার্যকলাপও বাজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার গতিবিধি, আমেরিকা-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক এবং গ্লোবাল টেনশন-এর মতো বিষয়গুলি FII-এর মনোভাব নির্ধারণ করবে। জুলাই মাসে এফআইআই-এর পক্ষ থেকে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে, তবে আগস্টে তারা কেনাকাটা চালিয়ে রাখবে নাকি মুনাফা তুলবে, তা দেখা আকর্ষণীয় হবে।
অপরিশোধিত তেলের দাম এবং ডলার-রুপিও প্রভাব ফেলবে
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অপরিশোধিত তেলের দামে অস্থিরতা চলছে। গ্লোবাল সরবরাহে সমস্যা, ওপেক দেশগুলির নীতি এবং যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির কারণে ক্রুডের দাম অস্থির। এর সরাসরি প্রভাব ভারতের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট এবং মুদ্রাস্ফীতির উপর পড়ে। একইভাবে, ডলারের বিপরীতে রুপির গতিবিধিও বাজারের মেজাজ নির্ধারণে বড় ভূমিকা নিতে পারে।
ছোট শেয়ারগুলিতেও দেখা যাবে অ্যাকশন
এই সপ্তাহে শুধু বড় শেয়ার নয়, মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ শেয়ারগুলিতেও অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। অটো, ব্যাঙ্কিং, এফএমসিজি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মতো বিভিন্ন সেক্টরের সাথে যুক্ত স্টকগুলিতে কার্যকলাপ বাড়তে পারে। এই শেয়ারগুলির উপর খুচরা বিনিয়োগকারীদের বিশেষ নজর থাকে এবং এদের গতিবিধি পুরো বাজারের দিক নির্ধারণ করে।
এই সপ্তাহের জন্য বাজারে দেখা যাবে জোর
মোটকথা, এই সপ্তাহটি শেয়ার বাজারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তা সে কোম্পানিগুলির ত্রৈমাসিক ফলাফল হোক, ফেডের সিদ্ধান্ত, আমেরিকান শুল্কের সময়সীমা অথবা অভ্যন্তরীণ ডেটা - প্রতিটি ফ্যাক্টরই বাজারকে ধাক্কা দিতে পারে বা উত্থান ঘটাতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের নজর প্রতিটি আপডেটের দিকে থাকবে।