শিবু সোরেনের প্রয়াণে রাজ্যসভায় শোক: কার্যক্রম স্থগিত

শিবু সোরেনের প্রয়াণে রাজ্যসভায় শোক: কার্যক্রম স্থগিত

ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রবীণ আদিবাসী নেতা শিবু সোরেনের প্রয়াণে রাজ্যসভায় শোক প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর সম্মানে সারা দিনের জন্য সংসদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

Shibu Sore Death: সোমবার রাজ্যসভার কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে, যখন প্রবীণ সদস্য এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। উপ-সভাপতি হরিবংশ এই দুঃখজনক সংবাদটি জানানোর সময় সোরেনকে একজন বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাঁর সম্মানে উচ্চকক্ষের কার্যক্রম সারা দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেন।

ঝাড়খণ্ডের রাজনীতির এক শক্তিশালী স্তম্ভ ছিলেন শিবু সোরেন

শিবু সোরেনের ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে যে অবদান রয়েছে, তা কোনো পরিচয়ের অপেক্ষা রাখে না। তিনি ১৯৪৪ সালের ১১ মে হাজারীবাগ জেলার গোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন এবং গোলা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকারের লড়াইকে নিজের জীবন হিসেবে বেছে নেন।

'দিশম গুরু' এবং 'গুরুজি' হিসাবে জনপ্রিয়তা

শিবু সোরেন সাধারণ মানুষের কাছে 'গুরুজি' নামে পরিচিত ছিলেন, অন্যদিকে আদিবাসী সম্প্রদায়ে তিনি 'দিশম গুরু' হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কেবল একজন রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। ঝাড়খণ্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সংগ্রাম করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর পুরো জীবন বঞ্চিত, আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় উৎসর্গীকৃত ছিল।

তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন

শিবু সোরেন ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্ব ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। তিনি সর্বদা স্থানীয় জনগণের চাহিদা এবং সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বহুবার আদিবাসী অঞ্চলের উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার রক্ষায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আটবার লোকসভা এবং তিনবার রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন

শিবু সোরেন আটবার লোকসভার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তিনবার রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। বর্তমানেও তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ সংসদীয় জীবন তাঁর অভিজ্ঞতা এবং জনগণের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাকে প্রতিফলিত করে। তিনি সংসদে সর্বদা সামাজিক ন্যায়বিচার, আদিবাসী কল্যাণ এবং গ্রামীণ উন্নয়নের মতো বিষয়গুলিতে সোচ্চার ছিলেন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন

২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শিবু সোরেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়কালে তিনি বিশেষভাবে গ্রামীণ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় অনেক অঞ্চলে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে এবং যে সমস্ত শ্রেণী দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল, তাদের মূল স্রোতে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

রাজ্যসভায় জানানো হল শ্রদ্ধাঞ্জলি

রাজ্যসভার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর উপ-সভাপতি হরিবংশ শোক প্রস্তাব পাঠ করার সময় শিবু সোরেনের অবদান স্মরণ করেন। তিনি বলেন যে সোরেন একজন অভিজ্ঞ সাংসদ ছিলেন, যিনি প্রতিটি ভূমিকায় নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ডেই নন, সারা দেশে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন।

এরপর সংসদে শিবু সোরেনকে শ্রদ্ধা জানাতে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এরপর উপ-সভাপতি ঘোষণা করেন যে তাঁর স্মৃতি ও সম্মানে রাজ্যসভার কার্যক্রম দিনের জন্য স্থগিত করা হল। যখন সংসদের কোনো বর্তমান সদস্যের মৃত্যু হয়, তখন এই প্রথা অনুসরণ করা হয়।

Leave a comment