সোনিপাতের একটি স্কুলে ১১ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে হোমওয়ার্ক সম্পূর্ণ না করার জন্য জনসমক্ষে অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানা মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশের ওপর জোর দিয়েছে।
সোনিপাত: জেলার একটি স্কুলে ৫ম শ্রেণির ১১ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে অপমানজনক শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ মানুষকে হতবাক করেছে। হোমওয়ার্ক সম্পূর্ণ না করার কারণে মেয়েটিকে ৫০ বার ওঠাবসা করানো হয়েছে, ক্লাস ও স্কুল প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করানো হয়েছে এবং অন্যান্য শিশুদের দিয়ে তাকে "শেম শেম" বলিয়ে জনসমক্ষে অপমান করা হয়েছে। এই ঘটনায় হরিয়ানা মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি গ্রহণ করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
স্কুলে ছাত্রীকে দেওয়া অপমানজনক শাস্তি
সূত্র অনুযায়ী, স্কুলের অধ্যক্ষ ছাত্রীটিকে তার হোমওয়ার্ক সম্পূর্ণ না করার জন্য অপমানজনকভাবে শাস্তি দিয়েছেন। মেয়েটিকে ওঠাবসা করানো হয়েছে এবং তাকে ক্লাস ও ইউকেজির বাইরের জায়গা পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ছোট শিশুদের দিয়ে তাকে অপমানজনক কথা বলিয়ে জনসমক্ষে লজ্জিত করা হয়েছে।
এই আচরণে ছাত্রীটি গুরুতর মানসিক আঘাত পেয়েছে। মেয়েটি ভয় ও উদ্বেগের কারণে স্কুলে যেতে পারেনি এবং তাকে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই ধরনের আচরণ শিশুদের উপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
হরিয়ানা মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে
হরিয়ানা মানবাধিকার কমিশন ঘটনাটি আমলে নিয়ে নির্দেশ দিয়েছে যে প্রতিটি শিশুর নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশে পড়াশোনা করার অধিকার রয়েছে। কমিশনের সভাপতিত্ব করেছেন বিচারপতি ললিত বাত্রা, এবং বিচার বিভাগীয় সদস্য কুলদীপ জৈন ও দীপ ভাটিয়াও তদন্তে জড়িত আছেন।
কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে প্রতিটি স্কুল এবং শিক্ষকের কর্তব্য হল শিশুদের যেকোনো ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করা। হরিয়ানার নীতিবাক্য "বচপন বাঁচাও, শিক্ষা অপনাও" (শৈশব বাঁচাও, শিক্ষা গ্রহণ করো) অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব হল শিশুরা যেন নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করে।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে
মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে যে, যদি এই অভিযোগগুলি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে তা সরাসরি সংবিধানের অধীনে শিশুদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হবে। বিশেষত, ২১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি শিশুর সম্মান এবং অমানবিক আচরণ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
কমিশন মামলাটির নিরপেক্ষ ও বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযোগকারী, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, অন্যান্য সাক্ষী এবং মেয়েটির চিকিৎসা করা মনোবিদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে। তদন্তের উদ্দেশ্য হল শিশুদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অপমানজনক আচরণ বন্ধ করা এবং ভবিষ্যতে এটি প্রতিরোধের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ
কমিশন সোনিপাতের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকেও নির্দেশ দিয়েছে যে তারা এই মামলার একটি বিস্তারিত রিপোর্ট কমিশনে জমা দিক। এতে শুধু তদন্তেই সহযোগিতা হবে না, বরং ভবিষ্যতে স্কুলগুলিতে শিশুদের সুরক্ষা ও সম্মান নিশ্চিত করার উপায়ও তৈরি করা যাবে।
কমিশনের উদ্দেশ্য হল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে কোনো শিশুই যেন অপমানজনক আচরণের শিকার না হয়। এর জন্য কমিশন স্কুল এবং শিক্ষকদের সতর্ক করছে যে, শিশুদের সাথে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনমূলক যেকোনো পদক্ষেপকে গুরুতরভাবে দেখা হবে এবং উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।