শ্রাবণ মাসে মহিলাদের সাজসজ্জা: ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও পার্বতীর আশীর্বাদ

শ্রাবণ মাসে মহিলাদের সাজসজ্জা: ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও পার্বতীর আশীর্বাদ

শ্রাবণ মাস, যেখানে শিবের প্রতি ভক্তি ও উপবাসের সময়, সেখানে এই সময়টা সৌভাগ্যবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যচর্চারও সময়। এই সাজসজ্জা কেবল দেখানোর জন্য নয়, বরং এর মধ্যে লুকিয়ে আছে সৌভাগ্য, প্রেম এবং দাম্পত্য জীবনের সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত গভীর প্রতীক। প্রতি বছরের মতো ২০২৫ সালের শ্রাবণও মহিলাদের জন্য সেইসব ঐতিহ্য পালনের সুযোগ নিয়ে এসেছে, যা থেকে তাঁরা মা পার্বতীর আশীর্বাদ লাভ করেন।

সাজসজ্জার শুরু হয় সবুজ রঙের শাড়ি দিয়ে

শ্রাবণে সবুজ রঙের শাড়ি পরা শুধু ফ্যাশন নয়, একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যও বটে। মনে করা হয়, সবুজ রঙ সমৃদ্ধি, জীবন ও প্রেমের প্রতীক। যখন কোনো মহিলা শ্রাবণ মাসের সোমবার ব্রতের দিন সবুজ রঙের শাড়ি পরেন, তখন তিনি কেবল শিব-পার্বতীর কৃপার অধিকারী হন না, বরং তাঁর দাম্পত্য জীবনে স্থিতিশীলতা ও আনন্দেরও অভিজ্ঞতা হয়। এই কারণেই শিবালয়গুলিতে দর্শনের জন্য আসা মহিলারা প্রায়শই সবুজ পোশাকে দেখা যান।

মেহেদির রঙে লুকানো থাকে স্বামীর মঙ্গলের বার্তা

হাতে মেহেদি লাগানো প্রত্যেক মহিলার জন্য সাজসজ্জার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু শ্রাবণে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। বলা হয়, মেহেদির রঙ যত গাঢ় হয়, স্বামীর প্রেম তত গভীর হয়। শ্রাবণে মহিলারা ব্রত পালনের আগে মেহেদি লাগান এবং মা পার্বতীকে অর্পণও করেন। এই ঐতিহ্য প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এবং আজও গ্রাম ও শহরের মহিলারা এটি গভীর বিশ্বাস নিয়ে পালন করেন।

সবুজ ঝুমকা ও লাল পায়ে ফুটে ওঠে শ্রাবণের ছবি

সাজসজ্জায় ঝুমকা একটি বিশেষ স্থান রাখে, এবং যখন সেটি সবুজ রঙের হয়, তখন শ্রাবণের পবিত্রতা আরও বাড়ে। মনে করা হয়, সবুজ ঝুমকা পরলে সৌন্দর্যে চার চাঁদ লাগে এবং মা গৌরীও প্রসন্ন হন। এর সঙ্গে পায়ে লাল রঙ (আলতা বা মহুয়া) লাগানোও শুভত্বের ইঙ্গিত দেয়। এই প্রথা কেবল একটি অলঙ্করণমূলক কাজ নয়, বরং নারীর পবিত্রতা ও গৃহস্থ জীবনের সম্মানকে প্রকাশ করে।

সবুজ রঙের টিপ থেকে শিব পান ইঙ্গিত

টিপ কেবল সৌন্দর্যের অংশ নয়, বরং কপালে অবস্থিত আজ্ঞা চক্রকে সাজানোর মাধ্যমও বটে। যখন মহিলারা শ্রাবণে সবুজ রঙের টিপ পরেন, তখন এটি সেই শুভ শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে, যা তাঁদের মধ্যে বিকশিত হয়। সবুজ রঙ শান্তি, সৌভাগ্য ও নারীত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। শিব এই ইঙ্গিত পান যে এই নারী তাঁর গৃহস্থ জীবনকে ধরে রাখতে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গীকৃত।

সবুজ রঙের চুড়ি ও পার্বতীর প্রতি অর্পণ

সবুজ রঙের চুড়ি বিবাহিত মহিলাদের জন্য শ্রাবণে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা হিসেবে বিবেচিত হয়। বলা হয়, এই চুড়ি মা পার্বতীর প্রিয়। মহিলারা শুধু নিজেরাই এটি পরেন না, বরং পার্বতীকে উৎসর্গও করেন। এর গভীর অর্থ হল নিজের নারীশক্তি ও সৌন্দর্য দেবীর প্রতি উৎসর্গ করা। এই ঐতিহ্যে দেবী ও নারীর মধ্যে একটি আত্মিক কথোপকথন হয়।

সাজসজ্জার পিছনে বিশ্বাস ও মনের কথা

শ্রাবণের সাজসজ্জার পেছনের অনুভূতি হল, কোনো মহিলা কেবল সুন্দর দেখাক, তা নয়, বরং তিনি তাঁর প্রেম, সমর্পণ এবং বিশ্বাসকে ব্যক্ত করতে পারেন। প্রতিটি সাজসজ্জার জিনিস – শাড়ি, টিপ, চুড়ি, মেহেদি ও ঝুমকা – কেবল অলঙ্কার নয়, একটি বার্তা, একটি সংকল্প যে তিনি তাঁর পরিবার ও গৃহস্থ জীবনকে সুন্দর করার জন্য উৎসর্গীকৃত।

শ্রাবণ ২০২৫-এ উপচে পড়ছে সাজসজ্জার উৎসাহ

এবার শ্রাবণ ২০২৫-এ সারা দেশের মহিলারা আবারও ঐতিহ্যের এই রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তুলছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মন্দির পর্যন্ত, সর্বত্র মহিলারা traditional পোশাক ও সাজসজ্জায় ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পূজা করছেন। নারীশক্তি, বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের এই সুন্দর মিলন শ্রাবণ মাসকে বিশেষ করে তোলে।

Leave a comment