নয়া পরীক্ষার নিয়ম চ্যালেঞ্জে আদালতের কঠোর নজর
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ SSC-র নতুন পরীক্ষার বিধিকে চ্যালেঞ্জ জানানো মামলার শুনানিতে কার্যত চমকে দেন বিচারপতি সৌমেন সেন। তিনি সরাসরি নির্দেশ দেন, সুপ্রিম কোর্টে SSC যে হলফনামা জমা দিয়েছে, তার নথি আদালতে পেশ করতে হবে। নতুন পরীক্ষায় ‘টিচিং এক্সপেরিয়েন্স’ বিষয়টি যেভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা আদালতের মতে যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।নতুন নিয়ম প্রণয়নের পিছনে আইনানুগ প্রক্রিয়া মানা হয়েছে কি না, তা জানতেই চায় আদালত। সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া তথ্য আদালতের নিরীক্ষণে আনতে তৎপর বেঞ্চ।
নম্বর বিভাজনের সিদ্ধান্ত কার?’—সরাসরি আঘাত বিচারপতির কণ্ঠে
বিচারপতি সেন প্রশ্ন তোলেন, SSC কি নিজে থেকে অতিরিক্ত শূন্যপদ সংযোজন করতে পারে? যদি না পারে, তবে ২০১৬ সালের নিয়ম কেন মানা হচ্ছে না? একই সঙ্গে তিনি বলেন, অতীতে বাতিল হওয়া নিয়োগের শিক্ষকরা কি তাঁদের অভিজ্ঞতা হিসেবে কোনও সুবিধা পাবেন? যদি পুরো নিয়োগই অবৈধ ঘোষিত হয়ে থাকে, তবে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা মান্যতা পাবে কীভাবে?SSC নিজেই কি নিয়ম তৈরি করছে? নাকি নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা সীমা লঙ্ঘন করছে?—এই প্রশ্নই এখন কেন্দ্রবিন্দু।
২০২৫ নিয়মে সীমিত সুবিধা মাত্র’—বিচারপতির পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট
বিচারপতির মতে, সুপ্রিম কোর্ট ২০২৫ সালের নতুন পরীক্ষায় শুধুমাত্র বয়সে ছাড়ের কথা বলেছে, টিচিং এক্সপেরিয়েন্স বা অতিরিক্ত নম্বর বরাদ্দের কথা নয়। এমন হলে তা বিশেষভাবে সুবিধা দিতে পারে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীকে। এ ধরনের ‘সীমিত সুবিধা’ SSC নিজেই তৈরি করছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে ‘বাছাই সুবিধা’ দেওয়ার ঝুঁকি, যা গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নষ্ট করতে পারে।
পাল্টা যুক্তি SSC-র: ‘নিয়ম তৈরির অধিকার রাজ্যের’
SSC জানায়, নতুন পরীক্ষায় টিচিং অভিজ্ঞতা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত একা কমিশনের নয়। রাজ্য সরকারই নিয়োগের নিয়ম তৈরি করে, কমিশন কেবল শূন্যপদ ঘোষণা ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়মে বদল আসতে পারে রাজ্যের নির্দেশে—এমনটাই জানানো হয় কমিশনের তরফে।কমিশনের তরফে দায় রাজ্যের ঘাড়ে চাপানো হলেও, আদালত বুঝতে চাইছে—সত্যিই কি সবকিছু নিয়মমাফিক হয়েছে?
পুরনো শূন্যপদে পুরনো নিয়মেই নিয়োগ’—ডিভিশন বেঞ্চের কড়া বার্তা
বিচারপতি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ২০১৬ সালের যেসব শূন্যপদ বাতিল হয়েছে, সেখানে নিয়োগ হতে হবে ২০১৬ সালের বিধিমাফিক। নতুন শূন্যপদ তৈরি হলে সেখানে অবশ্যই নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হতে পারে। তবে দুটি ধারা একত্রে মিশিয়ে নতুন কোনও পরীক্ষার কাঠামো তৈরি করা যায় না।দুটি ভিন্ন সময়ের শূন্যপদ ও নিয়ম মিশিয়ে একক নিয়োগ—এটা কখনওই আইনি পথে সম্ভব নয় বলে সাফ জানায় আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের রায় মানতেই হবে SSC-কে, নতুন নিয়মে ‘সুবিধা’ নয়!
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, কোনও শিক্ষক অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন না। শুধুমাত্র বয়স ও ন্যূনতম যোগ্যতা মার্কসের ক্ষেত্রেই ছাড় রয়েছে। তবে কমিশনের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে ‘টিচিং এক্সপেরিয়েন্স’-এর নাম করে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হলে তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী। মামলাকারীদের পক্ষে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস সামিম, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত প্রমুখ আইনজীবীরা আদালতের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করেন।বিচারব্যবস্থার নির্দেশ লঙ্ঘন নয়—SSC-র সিদ্ধান্ত এখন কঠিন চাপ ও বিতর্কের মুখে। আদালত আরও কড়া অবস্থান নিতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে।