সুইগি ও জোমাটোর প্ল্যাটফর্ম ফি বৃদ্ধি: গ্রাহকদের উপর আর্থিক চাপ

সুইগি ও জোমাটোর প্ল্যাটফর্ম ফি বৃদ্ধি: গ্রাহকদের উপর আর্থিক চাপ

সুইগি (Swiggy) মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো তাদের প্ল্যাটফর্ম ফি বাড়িয়ে ১৫ টাকা করেছে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই ফি ডেলিভারি চার্জ এবং জিএসটি (GST) থেকে আলাদা হবে। জোমাটোও (Zomato) তাদের প্ল্যাটফর্ম ফি ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে উভয় কোম্পানি প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অতিরিক্ত আয় করবে।

সুইগি প্ল্যাটফর্ম ফি: ফুড ডেলিভারি কোম্পানি সুইগি উৎসবের মরশুমে চাহিদা বাড়ার কারণে তাদের প্ল্যাটফর্ম ফি প্রতি অর্ডারে ১৫ টাকা করেছে। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এটি তৃতীয়বারের মতো বৃদ্ধি এবং এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ফি। এই চার্জ ডেলিভারি চার্জ এবং জিএসটি থেকে আলাদা হবে এবং সমস্ত শহরে এটি একই থাকবে না। জোমাটোও এই সময়ে তাদের প্ল্যাটফর্ম ফি প্রতি অর্ডারে ১২ টাকা করেছে। অনুমান করা হচ্ছে, এর ফলে উভয় কোম্পানি প্রতিদিন ৩ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত আয় করবে।

কীভাবে ফি বাড়ল

সুইগি ১৫ই আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের উপলক্ষে প্ল্যাটফর্ম ফি ১৪ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। যদিও পরে তা কমিয়ে ১২ টাকা করা হয়। এখন উৎসবের মরশুমে অর্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে কোম্পানি এটি আবার বাড়িয়ে ১৫ টাকা করেছে। এই ফি ডেলিভারি চার্জ, জিএসটি এবং রেস্তোরাঁর ফি থেকে আলাদা। এছাড়াও, এটি প্রতিটি শহরে একরকম থাকে না, বরং চাহিদা এবং অর্ডারের পরিমাণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

সুইগির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জোমাটোও তাদের প্ল্যাটফর্ম ফি বাড়িয়ে ১২ টাকা করেছে। উৎসবের মরশুমে চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, তাই উভয় কোম্পানি বেশি আয় করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। এই কারণেই প্ল্যাটফর্ম ফি দ্রুত পরিবর্তন করা হচ্ছে।

কত আয় হবে

সুইগির বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানি প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ অর্ডার সম্পন্ন করে। ১৫ টাকার নতুন প্ল্যাটফর্ম ফি থেকে কোম্পানি প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত আয় করবে। আগে এই আয় ১২ টাকার ফি-তে ২.৪ কোটি টাকা ছিল। এর মানে হল, কোম্পানি প্রতি ত্রৈমাসিকে প্রায় ৫৪ কোটি এবং বার্ষিকভাবে প্রায় ২১৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত আয় করতে পারে।

অন্যদিকে, জোমাটোর কাছে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ লক্ষ অর্ডার আসে। প্রতি অর্ডারে ১২ টাকার ফি থেকে তাদেরও প্রায় ৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত দৈনিক আয় হবে। ত্রৈমাসিক হিসাবে এটি ৪৫ কোটি এবং বার্ষিক ১৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

কবে কখন প্ল্যাটফর্ম ফি বাড়ানো হয়েছে

সুইগি এবং জোমাটো এপ্রিল ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো প্ল্যাটফর্ম ফি চালু করেছিল, যা প্রতি অর্ডারে মাত্র ২ টাকা ছিল। এরপর ধীরে ধীরে এই ফি বাড়তে থাকে। গত বছর নববর্ষের আগের দিন উভয় কোম্পানি অর্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে ফি আরও বাড়িয়েছিল। তারপর থেকে এই ফি বেশিরভাগ সময়ে ১০ টাকার উপরেই ছিল। কোম্পানিগুলি সাধারণত চাহিদাসম্পন্ন দিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফি বাড়ায় এবং যদি অর্ডারের সংখ্যা কমে না আসে তবে তা স্থায়ী করে দেয়।

কেন ফি বেড়েছে

কোম্পানিগুলি বলছে যে উৎসবের মরশুমে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে তাদের অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজন হয়। এই কারণে ফি বাড়ানো হয়। এটি ক্ষতি কমানো এবং মুনাফা বাড়ানোর একটি উপায়ও। সুইগি এবং জোমাটো উভয়ই বর্তমানে কুইক কমার্স (quick commerce) এবং নতুন পরিষেবাগুলিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে, যার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সুইগির সাম্প্রতিক ফলাফল

৩১শে জুলাই সুইগি তাদের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছিল। কোম্পানির ক্ষতি ৯৬ শতাংশ বেড়ে ১,১৯৭ কোটি টাকা হয়েছে, যেখানে গত বছর এই সময়ে এটি ছিল ৬১১ কোটি টাকা। গত ত্রৈমাসিকেও ক্ষতি ছিল ১,০৮১ কোটি টাকা। ক্ষতির প্রধান কারণ হল ইনস্টামার্ট অর্থাৎ কুইক কমার্স ইউনিটে করা বিপুল বিনিয়োগ।

তবে, কোম্পানির আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন ত্রৈমাসিকে সুইগির আয় ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৪,৯৬১ কোটি টাকা হয়েছে, যেখানে গত বছর এই সময়ে এটি ছিল ৩,২২২ কোটি টাকা। এতে স্পষ্ট যে কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু ক্ষতির সমস্যা এখনও রয়ে গেছে।

গ্রাহকদের উপর প্রভাব

প্ল্যাটফর্ম ফি বাড়ার কারণে গ্রাহকদের প্রতি অর্ডারে বেশি টাকা দিতে হবে। যদি কোনও গ্রাহক মাসে ২০ বার অর্ডার করে, তবে তাকে কেবল প্ল্যাটফর্ম ফি বাবদই এখন ৩০০ টাকা খরচ করতে হবে। এই কারণেই গ্রাহকদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে।

উৎসবের মরশুমে অর্ডারের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলো এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করে। তবে, বর্ধিত ফি-এর পরেও গ্রাহকরা একই সংখ্যক অর্ডার দেওয়া চালিয়ে যাবে কিনা, তা দেখার বিষয়।

Leave a comment