টি. রাজা সিংয়ের ইস্তফা: তেলেঙ্গানায় বিজেপির রাজনৈতিক সমীকরণ

টি. রাজা সিংয়ের ইস্তফা: তেলেঙ্গানায় বিজেপির রাজনৈতিক সমীকরণ

তেলেঙ্গানার গোশামহল থেকে বিধায়ক টি. রাজা সিংয়ের ইস্তফা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপ সেই বিতর্কের পরেই নেওয়া হয়েছে।

হায়দ্রাবাদ: ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তেলেঙ্গানার প্রভাবশালী বিধায়ক টি রাজা সিংয়ের (T Raja Singh) ইস্তফা গ্রহণ করেছে। তিনি ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। ইস্তফার কারণ হিসেবে তেলেঙ্গানা বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে এন. রামচন্দ্র রাওয়ের নিয়োগ নিয়ে মতবিরোধকে দায়ী করা হয়। বর্তমানে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর ইস্তফা মঞ্জুর করা হয়েছে, যা রাজ্যের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

কেন রাজা সিং ইস্তফা দিলেন?

রাজা সিং তাঁর চিঠিতে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে "স্থানীয় কর্মীদের উপেক্ষা এবং ভুল নেতৃত্ব নির্বাচন"-এর অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি বলেন, রাজ্য সভাপতির পদ নির্বাচনের সময় তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মতামত নেওয়া হয়নি এবং এমন একজন নেতাকে বেছে নেওয়া হয়েছে যাঁর জনসমর্থন তেমন শক্তিশালী নয়। যদিও তিনি এও স্পষ্ট করেছেন যে তিনি Hindutva ideology-র প্রতি তাঁর অঙ্গীকার বজায় রাখবেন।

গোশামহল থেকে লাগাতার তিনবার বিধায়ক

রাজা সিং তেলেঙ্গানার গোশামহল (Goshamahal) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে লাগাতার এই আসনে জয়লাভ করেছেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে, যখন রাজ্যে বিজেপির ফল দুর্বল ছিল, তখনও তিনি তাঁর আসন ধরে রাখতে সক্ষম হন। গোশামহল আসনটি হায়দ্রাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অংশ, যেখানে AIMIM-এর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি সাংসদ। এই অঞ্চলে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা রয়েছে, এবং রাজা সিং তাঁর সমর্থনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করেছেন।

রাজা সিংয়ের পরিচিতি একজন Hardline Hindutva Leader হিসেবে। তিনি গরুরক্ষা, মন্দির সুরক্ষা, এবং মুসলিম মৌলবাদ-এর মতো বিষয়গুলি নিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলেছেন। তিনি বজরং দল এবং শ্রীরাম যুব সেনা-র মতো সংগঠনগুলির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর মন্তব্যের জেরে বহুবার বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক বছর আগে, হযরত মুহম্মদ (স.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, যার পরে বিজেপি তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করে। যদিও ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল তাঁর সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নেয়।

বহু ফৌজদারি মামলারও সম্মুখীন

রাজা সিংয়ের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা রুজু করা হয়েছে, যার অধিকাংশই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি, বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ দেওয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত। যদিও এর পরেও তিনি তাঁর সমর্থকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং নিজেকে Hindu Voice হিসেবে তুলে ধরেন। রাজা সিংয়ের ইস্তফার ফলে আবারও বিজেপির Telangana Political Strategy নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে যখন দল রাজ্যে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে, তখন পুরনো এবং প্রভাবশালী নেতাদের দল ত্যাগ করা সাংগঠনিক দুর্বলতাকে প্রকাশ করে।

রাজা সিংয়ের মতো নেতার দলত্যাগ, বিশেষ করে যখন রাজ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তন হচ্ছে, বিজেপির জন্য Loss of grassroots connect-এর ইঙ্গিত হতে পারে।

Leave a comment