২০২৬-এ ‘আরও বেশি আসন চাই’ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা

২০২৬-এ ‘আরও বেশি আসন চাই’ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা

কলকাতার ধর্মতলা যেন ২১ জুলাইয়ের সকালে পরিণত হয়েছিল এক রাজনৈতিক মহাসমাবেশের চূড়ান্ত কেন্দ্রে। শহিদ দিবসের আবেগময় আবহে, ১৯৯৩ সালের সেই কালো ইতিহাসকে স্মরণ করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিলেন নতুন দিশা—‌২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আগের চেয়েও বেশি আসন জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপানোর ডাক। নেত্রী স্পষ্ট বললেন, “২০২৬-এ আরও বেশি সিট চাই। এবার খেলা হবে আরও জোরে।” কর্মীরা প্রত্যুত্তর দিলেন আগুন ঝরানো স্লোগানে—"আবার খেলা হবে!"

শুধু বাংলা নয়, লক্ষ্য এবার দিল্লি, বললেন মমতা

শুধু রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখাই নয়, দিল্লির ‘সিংহাসন’ এবার তৃণমূলের নজরে—এমনটাই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় এজেন্সির ‘অতিরিক্ত সক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বললেন, জেলে পাঠালেও বৃক্ষ হয়ে ফিরে আসব। দিল্লি পর্যন্ত শাখা-প্রশাখা বিস্তার করব। দিল্লি থেকে সরাতে হবে। তাঁর স্পষ্ট ইঙ্গিত—২০২৬-এ বাংলার দখল নিশ্চিত করে ২০২৯-এর লোকসভা ভোটে দিল্লির দিকে এগোবে তৃণমূল।

‘চোর-ডাকাত বলে লাভ নেই’, কেন্দ্রকে পাল্টা আক্রমণে নেত্রী

বিজেপিকে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “চোর-ডাকাত বললেই কিছু হয় না। কেউ কিছু করলে আমরা ব্যবস্থা নিই। আগে নিজেদের দিকে তাকাও।” কেন্দ্রীয় সরকার এবং এজেন্সির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআই-এর মতো সংস্থার রাজনৈতিক ব্যবহারে যে বিরক্ত মমতা, তা তাঁর সুরেই স্পষ্ট। এই লড়াই শুধুই রাজনৈতিক ক্ষমতার নয়, সম্মানের বলেও বার্তা দেন তিনি।

২১ জুলাইয়ের ইতিহাস তুলে ধরে আবেগে ভাসালেন তৃণমূল সুপ্রিমো

এই দিনে ১৯৯৩ সালে শহিদ হয়েছিলেন যুব কংগ্রেসের ১৩ জন কর্মী। সেই ঘটনার স্মৃতি টেনে মমতা বলেন, “২১ জুলাই মানেই আত্মবলিদান। গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের দিন। আজ থেকে আমরা নতুন লড়াই শুরু করলাম।” তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু, আর পুলিশমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গুলি চালানোর নির্দেশ কে দিয়েছিল, তা আজও অজানা। মমতা সেই বিচারহীনতার প্রশ্ন নতুন করে উত্থাপন করে দিলেন, যেন মনে করিয়ে দিলেন—তাঁর রাজনীতি শুরুই হয়েছিল লড়াই দিয়ে।

অভিষেকের উজ্জ্বল উপস্থিতি, যুব কর্মীদের উজ্জীবিত বার্তা

মঞ্চে মমতার পাশে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উপস্থিতিতে যুব কর্মীদের মধ্যে ছিল আলাদা উদ্দীপনা। অভিষেক বলেন, বাংলার মানুষ জানে কোথায় থাকলে লড়াইটা হয়, আর কে শুধু কথা বলে। আগামী ২০২৬-এর লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হোন। বিজেপি আর বামেদের বিপরীতে আমরা লড়াইটা আরও বড় করব।

রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা স্পষ্ট: আক্রমণাত্মক মুডে তৃণমূল

এই সভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেস যে তাদের আগামী নির্বাচনী রণকৌশলের রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছে, তা বলাই যায়। মমতার বার্তা একদম স্পষ্ট—বিজেপি এবং বাম, দু'দিক থেকেই চাপ থাকলেও তাঁরা ২০২৬-এ আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে চায়। এবং সেই পথে প্রথম ধাপ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ২১ জুলাইয়ের আবেগ ও ইতিহাস।

Leave a comment