মোদী বাংলায় বললে তিনিও ‘বাংলাদেশি’? রাজনৈতিক বারুদ ছড়াল দুর্গাপুরে
দুর্গাপুরে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা ঘিরে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা। কিন্তু প্রচারের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী বাংলায় কিছু বললেই, তাঁকেও কি 'বাংলাদেশি' আখ্যা দেওয়া হবে? এই প্রশ্নেই যেন আগুনে ঘি ঢালল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যেভাবে বাঙালিদের হেনস্থা করা হচ্ছে, তার প্রতিবাদে মোদীর সভার ঠিক আগে এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ এক বিস্ফোরক পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচটি জ্বলন্ত প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় ঘাসফুল শিবির।তৃণমূল স্পষ্টতই জানিয়ে দেয়, বাংলায় কথা বলা কখনওই অপরাধ নয়। বরং যারা বাংলায় কথা বলার জন্য কাউকে হেনস্থা করে, তাদের মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। বাঙালি মানেই বাংলাদেশি, এই বিভ্রান্তিকর প্রচার করে আসলে বিজেপি একটি ভাষাভিত্তিক বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে—এমনই কটাক্ষ উঠে আসে তৃণমূলের তরফে।এই অংশে মোদীর বাংলায় ভাষণ দেওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘বাংলা বললে বাংলাদেশি’ বলার রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং নির্বাচনী রাজনীতির পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে।
“বাংলা মানেই অপরাধ?”: পাঁচটি ধারালো প্রশ্নে তোপ তৃণমূলের
তৃণমূল কংগ্রেস তাদের পোস্টে পাঁচটি প্রশ্ন রেখেছে, যা সরাসরি মোদী এবং তাঁর দলের কাছে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে:
- বাংলা বলা কি অপরাধ?
- যদি তাই হয়, তবে বাংলায় রচিত জাতীয় সংগীত ‘জন-গণ-মন’ গাওয়াও কি অপরাধ?
- যদি তা-ও না হয়, তবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের বাংলা বলার জন্য কেন হেনস্থা করা হচ্ছে?
- সংবিধানের কোন ধারায় ভাষার ভিত্তিতে নাগরিকদের এভাবে বৈষম্য করা যায়?
- এভাবে কি বাংলার মানুষের মন জয় করা যাবে? বাংলায় সরকার গড়া যাবে?
- এই প্রশ্নগুলির মাধ্যমে তৃণমূল বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা শুধু আবেগ নয়, যুক্তির উপরেও আঘাত করছে।
- তারা এই ঘটনাকে শুধু এক রাজ্য নয়, ভারতীয় ফেডারালিজম এবং সাংবিধানিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বলেই তুলে ধরেছে। তৃণমূলের প্রশ্নগুলিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্কের চরিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে এখানে। পাঠক বুঝতে পারবেন যে প্রশ্নগুলো আসলে গভীরতর সামাজিক ও সাংবিধানিক ইঙ্গিত বহন করছে।
শশী পাঁজার তোপ: “বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি, এটা কোন রাজনীতি?”
রাজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজা এক সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি? তাহলে মোদী বাংলায় বললেই তাঁকেও তাই বলবেন? তাঁর অভিযোগ, আসাম, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের শুধু ভাষার ভিত্তিতে হেনস্থা করা হচ্ছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একাধিক বাঙালিকে পুশব্যাক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।শশী আরও বলেন, ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তাই প্রধানমন্ত্রী পর্যটকের মতো বাংলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাংলার সংস্কৃতি বোঝেন না, অথচ রবীন্দ্রনাথের নাম আওড়ে বাংলার মাটি ছুঁতে চাইছেন।এই অংশে শশী পাঁজার বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ভাষা ও পরিচয়ের রাজনীতির ইস্যু স্পষ্ট।
“টেলিপ্রম্পটার দেখে রবীন্দ্রনাথ? তাহলে মোদীকেই বাংলাদেশি বলা হোক!”— সুদীপ রাহার মন্তব্যে রাজনৈতিক ঝড়
তৃণমূল নেতা সুদীপ রাহা বলেন, মোদিজি টেলিপ্রম্পটার দেখে বাংলায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলবেন আর সাধারণ বাঙালি তা বললেই সে হয়ে যাবে বাংলাদেশি? তিনি প্রশ্ন তোলেন, মোদীর দল যখন ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর কথা বলে, তখন একটিমাত্র ভাষা ছাড়া অন্য ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে এত ঘৃণা কেন?সুদীপ জানান, বিজেপি নেতারা বাংলায় ভাষণ দিতে এসে রবীন্দ্রনাথের নাম মুখে আনেন, অথচ বাঙালিদের কথায় তাঁদের ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করেন। শুধু তাই নয়, পাণ্ডবেশ্বরে মোদীর সভার আগেই বিজেপির ২০০ জন কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এর মাধ্যমে সুদীপ বুঝিয়ে দেন, বিজেপির নীতির সঙ্গে বাঙালিদের যোগ নেই। এই অনুচ্ছেদে সুদীপ রাহার ব্যঙ্গ-রসাত্মক মন্তব্য ও তৃণমূলের দলবদলের প্রেক্ষিতে বাংলার জনমানসের রাজনৈতিক রূপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।