টমেটো খেলে কি সত্যিই বাড়ে বাতের ব্যথা বিশেষজ্ঞ জানালেন আসল তথ্য

টমেটো খেলে কি সত্যিই বাড়ে বাতের ব্যথা বিশেষজ্ঞ জানালেন আসল তথ্য

টমেটো ছাড়া রান্না যেন অসম্পূর্ণ

বাংলার প্রতিটি রান্নাঘরে টমেটো যেন অপরিহার্য এক উপাদান। ভাজা, ঝোল বা তরকারি—প্রায় সব রান্নাতেই টমেটোর ব্যবহার থাকে। এই ফল-সবজির মিশ্রণে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন কে। শুধু তাই নয়, টমেটো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে এবং হার্টেরও ভালো রাখে। আঁশের প্রাচুর্যের জন্য এটি হজমে সহায়ক। কিন্তু এত গুণের পরও অনেকের বিশ্বাস—টমেটো খেলে নাকি বাতের ব্যথা বেড়ে যায়।

টমেটো নিয়ে বিভ্রান্তি

শুধু বাতের ব্যথাই নয়, অনেকের ধারণা টমেটো খেলে গ্যাস, বদহজম কিংবা জ্বালাপোড়ার সমস্যা বাড়তে পারে। এই ভ্রান্ত ধারণাই বহুদিন ধরে ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন খ্যাতনামা পুষ্টিবিদ ডাঃ প্রিয়াঙ্কা রোহাতগি। তাঁর মতে, টমেটো নিয়ে যেসব আশঙ্কা প্রচলিত আছে, তার বেশিরভাগেরই কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

সোলানিন টক্সিনের ভ্রান্ত ধারণা

অনেকে বলেন টমেটোতে সোলানিন নামের এক ধরনের টক্সিন থাকে, যা প্রদাহ ও ফোলাভাব বাড়ায়। ফলে বাতের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এর পক্ষে কোনও পূর্ণ প্রমাণ নেই। ডাক্তার রোহাতগি জানাচ্ছেন—টমেটোতে থাকা যৌগগুলি জলে দ্রবণীয়। তাই খুব বেশি টমেটো একসাথে খেলে অস্বস্তি হতে পারে, কিন্তু সীমিত পরিমাণে খেলে তার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই।

টমেটোর স্বাস্থ্যকর দিক

টমেটোতে ক্যালোরি কম আর আঁশ প্রচুর। নিয়মিত ডায়েটে টমেটো রাখলে ক্যালোরি ইনটেক নিয়ন্ত্রণে থাকে। টমেটোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লাইকোপেন, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এটি ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ কমায়, শরীরে জমে থাকা চর্বি গলাতে সাহায্য করে এবং হার্ট ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখে।

গ্যাস ও বদহজমের সমস্যা

যেহেতু টমেটো অ্যাসিডিক প্রকৃতির, এতে ম্যালিক এবং সাইট্রিক অ্যাসিডের মতো যৌগ রয়েছে। তাই অনেক সময় বেশি টমেটো খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি কিংবা বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে স্বাভাবিক মাত্রায় খেলে এই সমস্যার আশঙ্কা নেই।

ইউরিক অ্যাসিডে সতর্কতা

যাঁদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি, তাঁদের জন্য টমেটো সীমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টমেটোর গ্লুটামেট উপাদান শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে গাউট বা জয়েন্টে ব্যথার মতো সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

কিডনিতে পাথর—মিথ না সত্যি?

আরেকটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো—টমেটো নাকি কিডনিতে পাথর তৈরি করে। কিন্তু ডাক্তার রোহাতগি জানিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ। টমেটোতে অক্সালেটের পরিমাণ এতটাই কম যে, এর কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় যে কোনও খাবারই শরীরের ক্ষতি করতে পারে, সেটা টমেটোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

টমেটো সংরক্ষণে ভুল ধারণা

অনেকে টমেটো দীর্ঘ সময় ফ্রিজে রেখে দেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রিজে দীর্ঘক্ষণ রাখলে টমেটোর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। বরং এটিকে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করাই উত্তম। এতে টমেটো খাওয়ার পক্ষে আরও উপকারী থাকে।

লাইকোপেনের জাদু

সবশেষে টমেটোর সবচেয়ে বড় উপকারিতার কথা বলতেই হয়। এতে রয়েছে লাইকোপেন, যা ক্যানসার প্রতিরোধ থেকে শুরু করে হার্ট, চোখ ও ত্বককে সুরক্ষা দেয়। ফলে টমেটো খেলে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো থাকে।

উপসংহার

সারকথা, টমেটো নিয়ে যত বিভ্রান্তি আছে, তার বেশিরভাগই আসলে গুজব ছাড়া কিছু নয়। সীমিত পরিমাণে টমেটো খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে না, বরং শরীরকে বহু উপকার দেয়। তবে যাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বা অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণে টমেটো খাওয়াই উত্তম।

 

Leave a comment