ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর ৫০০% শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন। এর ফলে ভারত-চীনের মতো দেশগুলির ব্যবসার উপর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্প শুল্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে শক্তি কেনা দেশগুলির উপর কঠোর মনোভাব দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে যে দেশগুলি রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস বা ইউরেনিয়ামের মতো শক্তি পণ্য কেনে, তাদের উপর ৫০০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) আরোপ করা যেতে পারে। এই প্রস্তাবিত পদক্ষেপের সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারত ও চীনের মতো দেশগুলির উপর, যারা রাশিয়া থেকে বৃহৎ পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে।
ট্রাম্পের কৌশল: পুতিনের উপর চাপ সৃষ্টি করা
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এখন তাঁর লক্ষ্য হল রাশিয়া থেকে শক্তির মাধ্যমে হওয়া আয়কে সীমিত করা, যাতে পুতিনের উপর যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা যায়। ট্রাম্পের মতে, রাশিয়ার শক্তি বিক্রিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তবেই ইউক্রেন যুদ্ধকে থামানো যেতে পারে।
'Sanctioning Russia Act of 2025' কি?
এই প্রস্তাবিত আইনটি এপ্রিল ২০২৫ সালে রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবং ডেমোক্রেট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল মার্কিন সিনেটে পেশ করেছিলেন। এতে তিনটি প্রধান বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- রাশিয়ার বিশ্বব্যাপী শক্তি সরবরাহের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
- রুশ কোম্পানি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
- রাশিয়া থেকে শক্তি পণ্য কেনা দেশগুলির উপর ৫০০% পর্যন্ত শুল্ক।
ট্রাম্প এই প্রস্তাবের সমর্থন করে বলেছেন যে কংগ্রেস এই বিল পাস করুক বা না করুক, তিনি তাঁর স্তরে এটি কার্যকর করতে স্বাধীন এবং এটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন।
ট্রাম্পের পরিবর্তিত ইউক্রেন নীতি
ট্রাম্প সাধারণত আমেরিকার বৈদেশিক নীতিতে হস্তক্ষেপ করা থেকে সতর্ক থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তিনি ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
সিনেটর গ্রাহামের বক্তব্য: এই আইন একটি 'ব্রেকথ্রু'
সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এই প্রস্তাবিত আইনটিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ 'ব্রেকথ্রু' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যদি কোনো দেশ রাশিয়া থেকে শক্তি কেনে এবং ইউক্রেনকে সাহায্য না করে, তবে সেই দেশকে আমেরিকায় তাদের পণ্যের উপর ৫০০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক দিতে হবে।
ভারত ও চীনের উপর এর প্রভাব
ভারত এবং চীন রাশিয়ার প্রধান তেল-ক্রেতা দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। যদি এই আইন পাস হয় এবং ট্রাম্প এটি কার্যকর করেন, তবে উভয় দেশকে আমেরিকায় তাদের পণ্য পাঠাতে ভারী শুল্ক দিতে হতে পারে। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এই পদক্ষেপের ফলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে।
ভারত বর্তমানে রাশিয়া থেকে ভর্তুকি হারে তেল কিনছে, যা তার জ্বালানি খরচ কমিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যদি আমেরিকার এই আইন কার্যকর হয়, তাহলে ভারতকে দ্বিগুণ চাপের সম্মুখীন হতে হবে - রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনার সুবিধা এবং আমেরিকায় রপ্তানির উপর ক্রমবর্ধমান শুল্ক।
ট্রাম্প আগেও শুল্কের ঘোষণা করেছেন
ট্রাম্প সম্প্রতি অন্যান্য দেশগুলির উপরও শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ:
- ব্রাজিলের উপর ৫০% শুল্ক।
- কানাডার উপর ৩৫% শুল্ক।
- ফিলিপাইনস, মলদোভা, শ্রীলঙ্কা, লিবিয়া এবং অন্যান্য ৭টি দেশের উপরও নতুন শুল্ক।
ট্রাম্প আরও স্পষ্ট করেছেন যে এই শুল্কগুলি ১ আগস্ট, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
আমেরিকার এই নীতি কেন গুরুত্বপূর্ণ
রাশিয়ার শক্তি আয় সেই দেশের অর্থনীতি এবং সামরিক অভিযানের জন্য একটি প্রধান উৎস। আমেরিকার ধারণা, যদি বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার শক্তি কেনা কমে যায়, তবে যুদ্ধকে আর্থিকভাবে দুর্বল করা যেতে পারে। তাই আমেরিকা রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কেনা দেশগুলিকে অর্থনৈতিকভাবে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে।