মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অতিরিক্ত শুল্ক পশ্চিমবঙ্গের চর্মশিল্পে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বানতলার কারখানাগুলো থেকে আমেরিকার বাজারে প্রতি বছর প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার চর্মপণ্য রপ্তানি হয়। শুধু তাই নয়, রাজ্যের আন্তর্জাতিক রপ্তানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা আমেরিকা। নতুন শুল্কের ফলে মার্কিন ক্রেতারা বরাত বাতিল করলে শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বহু শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
চাহিদাসম্পন্ন পণ্য ‘দামি’ হওয়ার শঙ্কা
বানতলার চামড়ার ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট থেকে শুরু করে গ্লাভস ও অ্যাপ্রন পর্যন্ত বহু পণ্যের স্থায়ী বাজার আমেরিকায়। কিন্তু অতিরিক্ত শুল্কের কারণে এই পণ্যগুলির দাম মার্কিন বাজারে বেড়ে গেলে ক্রেতাদের বড় অংশ সরে যেতে পারেন। রপ্তানিকারক সংস্থাগুলির মতে, একবার এই প্রবণতা শুরু হলে ব্যবসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে শ্রমিকদের উপার্জনের উপর।
শুল্কের বোঝা বাড়ছে বহুগুণে
কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস–এর ভাইস–চেয়ারম্যান রমেশ জুনেজা জানিয়েছেন, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের চর্মপণ্যের উপর ২–৮ শতাংশ আমদানি শুল্ক কার্যকর রয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে ধাপে ধাপে সেই হার বেড়ে মোট ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপিত হতে চলেছে। এর ফলে রপ্তানির প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিযোগী দেশগুলির তুলনায় ভারতের অসুবিধা
ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন বর্তমানে আমেরিকায় চর্মপণ্যের জন্য ৩০ শতাংশ আমদানি শুল্কের আওতায়। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশের উপর শুল্কের হার ভারতের তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে উচ্চ শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের চর্মশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
রাজ্যের চর্মশিল্পে প্রায় ৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন, যার মধ্যে ৬০ শতাংশই রপ্তানি–নির্ভর শিল্পে যুক্ত। আমেরিকা থেকে বরাত বাতিল হলে ট্যানারি ও প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির উৎপাদন কমবে, যার ফলে বহু শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় আছেন। শিল্পমহলের মতে, এই ধাক্কা সামাল দিতে সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি।
কেন্দ্রের কাছে ভর্তুকির আর্জি
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় চর্মশিল্প রপ্তানিকারক পরিষদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে ব্যাঙ্ক ঋণের উপর ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৫ আগস্ট আমেরিকা থেকে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল দিল্লিতে বৈঠকে এলে বিষয়টি আলোচনায় তোলার জন্যও আশাবাদী জুনেজা।
বিশ্ববাজারে ভারতের অবস্থান
ভারত থেকে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে চর্মপণ্য রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার চর্মপণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে আমেরিকায় গেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য। পশ্চিমবঙ্গের অবদানও বিশাল—শুধু এই রাজ্য থেকেই প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকার চর্মপণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু শুল্কের নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এই সাফল্যের ধারা বড় ধাক্কা খেতে পারে।