এসবিআই রিসার্চের পূর্বাভাস: ২০২৫ সালের অক্টোবরে আরবিআই রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে

এসবিআই রিসার্চের পূর্বাভাস: ২০২৫ সালের অক্টোবরে আরবিআই রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে

এসবিআই রিসার্চের মতে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ২০২৫ সালের এমপিসি বৈঠকে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে। জিএসটি-তে পরিবর্তন এবং কম মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই হার কমানো বিনিয়োগকারী এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্যই ইতিবাচক সংকেত দেবে। বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং সরকারি ঋণের পরিস্থিতিও এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে।

GST 2.0: আরবিআই ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ২০২৫ সালের মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি) বৈঠকে রেপো রেট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এসবিআই রিসার্চের মতে, জিএসটি-তে পরিবর্তন এবং কম মুদ্রাস্ফীতির কারণে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হার কমানো সবচেয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ হবে। এটি বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক সংকেত দেবে এবং অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাপী ইল্ড, ভারতে সরকারি ও রাজ্য ঋণ, এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।

সেপ্টেম্বরে হার কমানোর সম্ভাবনা

জুন ২০২৫-এ আরবিআই তার নীতিগত হার কমিয়েছিল। এরপর বাজারে ইল্ড বাড়তে শুরু করে, যা বিনিয়োগকারী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে তোলে। এসবিআই রিসার্চ মনে করে যে সেপ্টেম্বরে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হার কমানো ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি সুষম এবং সঠিক পদক্ষেপ হবে।

জিএসটি-তে সাম্প্রতিক পরিবর্তন এবং কম মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি হার কমানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। জুনের পর থেকে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং এফওয়াই২৭-এ সিপিআই প্রায় ৪% বা তার কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জিএসটি পরিবর্তনের কারণে অক্টোবরে এই সংখ্যা ১.১% পর্যন্ত কমতে পারে, যা ২০০৪ সালের পর সর্বনিম্ন স্তর হবে।

নীতি পরিবর্তন না করার ঝুঁকি

এসবিআই রিসার্চে বলা হয়েছে যে, যদি আরবিআই এখন হার না কমায়, তবে এটিকে টাইপ ২ ত্রুটি হিসাবে গণ্য করা হবে। এর অর্থ হল, মুদ্রানীতিকে বিবেচনা না করে কোনো পরিবর্তন না করা। এই সময়ে, যখন মূল্যস্ফীতি কম, হার কমানো বাজারের প্রত্যাশার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে এবং বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক সংকেত দেবে।

ভবিষ্যতেও হার কমানোর সম্ভাবনা

বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি মুদ্রানীতির প্রতি সতর্ক রয়েছে। অনেক দেশ হার কমিয়েছে, কিন্তু বাজার এখনও স্থিতিশীল নয়। আমেরিকায় ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সম্প্রতি তাদের ফেড ফান্ডস রেট ৪% থেকে ৪.২৫% পর্যন্ত কমিয়েছে। ফেডের চেয়ারম্যান এটিকে “রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কাট” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী মুদ্রাস্ফীতি ২% লক্ষ্যের কাছাকাছি থাকবে।

আমেরিকায় কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং রয়ে গেছে। বাড়ির দাম বাড়ছে এবং কিছু খাদ্য সরবরাহেও সমস্যা রয়েছে। এই কারণগুলির জন্য ফেড হার কমিয়েছে এবং আগামী মাসগুলিতেও কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতে সরকারি ও রাজ্য ঋণের পরিস্থিতি

ভারতে সরকারি এবং রাজ্য উন্নয়ন ঋণ (এসডিএল)-এ সম্প্রতি বৃদ্ধি দেখা গেছে। এসবিআই রিসার্চের মতে, রাজ্যগুলির ঋণ বাড়ছে এবং এফওয়াই২০১৮-তে দীর্ঘমেয়াদী এসডিএল-এর অংশ ছিল ২২%, যা এফওয়াই২০২৬-এ বেড়ে ৭১% হয়েছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি তাদের ঋণের ম্যাচুরিটি দীর্ঘায়িত করার জন্য “সুইচ” ব্যবহার করছে। এর ফলে রাজ্যগুলির উপর দ্রুত পরিশোধের চাপ কমবে এবং আর্থিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে।

রাজ্যগুলির এসডিএল ইস্যু-তেও পার্থক্য দেখা গেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ সবচেয়ে বেশি পেপার জারি করেছে, যেখানে মহারাষ্ট্রের পেপারের গড় সবচেয়ে বেশি। এর অর্থ হল বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি এবং নতুন কৌশলের উপর মনোযোগ দিতে হবে।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা

বিদেশী বিনিয়োগকারীরা (এফপিআই) এখন ভারতের বন্ড মার্কেটে আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে। ফুলি অ্যাক্সেসিবল রুট (এফএআর)-এর অধীনে তারা আরও বেশি বিনিয়োগ করার সুবিধা পেয়েছে। এফপিআইগুলির কাছে বন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা রয়েছে, যেখানে ইক্যুইটিতে তাদের অংশ বাজার মূলধনের প্রায় ১৬%।

ভবিষ্যতে ভারত এবং আমেরিকার সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য বাড়তে পারে। ভারতীয় বন্ডকে বৈশ্বিক সূচকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বাড়াবে এবং বাজারে তারল্য উন্নত হবে।

Leave a comment