আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীনের গণমাধ্যম। গ্লোবাল টাইমস বলেছে, আমেরিকা কেবল সেই বন্ধুদের চায় যারা বাধ্য এবং বিরোধিতা করে না।
Trump Tariff India: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভারতের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক (Tariff) আরোপের সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চীনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সংবাদপত্রটি তাদের संपादীয়তে ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের প্রশংসা করে আমেরিকার নীতিকে "দাদাগিরি" আখ্যা দিয়েছে।
আজ্ঞাবহ বন্ধু নাকি কৌশলগত স্বাধীনতা?
গ্লোবাল টাইমসের মতে, আমেরিকা ভারতকে একটি "মহান বন্ধু" মনে করে, কিন্তু তখনই যখন সে আমেরিকার আদেশ পালন করে। যেই মুহূর্তে ভারত তার বিদেশ নীতিতে স্বাধীনতা দেখায়, সে আমেরিকার নজরে খারাপ হয়ে যায়।
পত্রিকাটি লিখেছে যে, ভারত ও আমেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে নয়, বরং ভারতের মার্কিন আদেশের প্রতি অসম্মতির কারণে হয়েছে। আমেরিকা ভারতকে কেবল একটি "আজ্ঞাবহ বন্ধু" হিসাবে দেখতে চায়।
আমেরিকার কৌশল: চাপ সৃষ্টি করে সিদ্ধান্ত চাপানো
গ্লোবাল টাইমস মনে করে যে আমেরিকা, ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে স্বীকার করতে পারছে না। যখন ভারত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার সিদ্ধান্তে তার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তখন আমেরিকা এটিকে তার বিশ্বব্যাপী কৌশলের বিরুদ্ধে মনে করেছে। এই কারণেই আমেরিকা এখন ভারতের উপর বাণিজ্যিক শুল্ক চাপিয়ে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
দ্বৈত নীতি: আমেরিকা নিজেই রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য করে
গ্লোবাল টাইমস আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বৈত নীতিকেও তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, একদিকে আমেরিকা ভারতের উপর রাশিয়া থেকে বাণিজ্য করার অভিযোগ করে, অন্যদিকে তারা নিজেরাই রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম, প্যালাডিয়াম এবং সংশোধিত তেল প্রচুর পরিমাণে আমদানি করে।
ফেব্রুয়ারিতে ছিল বন্ধুত্বের কথা, এখন সম্পর্কে ফাটল
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে "চমৎকার বন্ধু" বলেছিলেন। কিন্তু এখন সেই আমেরিকাই ভারতের উপর ভারী শুল্ক চাপিয়ে কৌশলগতভাবে নতি স্বীকার করাতে চাইছে। এই পরিবর্তন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অস্থিরতা এবং আমেরিকার স্বার্থপর নীতিকে তুলে ধরে।
আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের ফাটলের কারণ
গ্লোবাল টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, আমেরিকা চেয়েছিল ভারত যেন তাদের বাজারকে মার্কিন কৃষি পণ্যের জন্য আরও বেশি করে খুলে দেয়। কিন্তু ভারত তাদের কৃষকদের স্বার্থে তা করতে অস্বীকার করে। এই বাণিজ্যিক মতভেদ এখন শুল্ক বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও, রাশিয়ার সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতাকে আমেরিকা চাপ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করছে। আমেরিকার উদ্দেশ্য দ্বৈত — রাশিয়ার উপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করা এবং ভারতকে আমেরিকার দিকে ঝুঁকানো।
ভারতের "ভুল" কি শুধু তেল কেনা?
গ্লোবাল টাইমস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে — ভারতের ভুল কি শুধু এই যে সে রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে? নাকি আসল বিষয় হল ভারত আমেরিকার আদেশ মানতে অস্বীকার করছে? আমেরিকা ভারতের কূটনৈতিক স্বাধীনতাকে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করছে, যেখানে এই স্বাধীনতা ভারতের বিদেশ নীতির পরিচয়।
বহুধ্রুবীয় বিশ্বের সমর্থনকারী ভারত
গ্লোবাল টাইমস ভারতের বিদেশ নীতির প্রশংসা করে বলেছে যে, ভারত বিগত বছরগুলোতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। ভারত ব্রিকস এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) এর মতো মঞ্চে সক্রিয়, পাশাপাশি আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
শুল্ক বিতর্কের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর চীন সফর
এরই মধ্যে, একটি বড় কূটনৈতিক ঘটনা হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগস্ট মাসের শেষে চীন সফর করতে পারেন। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য এবং কৌশলগত সম্পর্কে উত্তেজনা রয়েছে। এই যাত্রা ভারতের স্বাধীন বিদেশ নীতির প্রতিফলন ঘটায়।