দুই ভাইয়ের গল্প: একই পরিবেশে ভিন্ন পথের যাত্রী

দুই ভাইয়ের গল্প: একই পরিবেশে ভিন্ন পথের যাত্রী

এটি দুই আপন ভাই — রাহুল এবং মনোজের গল্প। দুজনের জন্ম একটি ছোট গ্রামে। তাদের বাবা ছিলেন একজন মদ্যপ এবং প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরে এসে গালিগালাজ করতেন, মায়ের উপর হাত তুলতেন এবং সংসারে তিক্ততা লেগেই থাকত। দারিদ্র্য, ঝগড়া এবং দুঃখের আবহাওয়া ছিল সেই বাড়িতে। দুই ভাই একই পরিবেশে চোখ খুলেছিল, কিন্তু যখন বড় হলো তখন তাদের চিন্তা-ভাবনা এবং পথ একেবারে আলাদা হয়ে গেল।

একই রকম upbringing, দুই ভিন্ন গন্তব্য

রাহুল এবং মনোজ দুজনেই একই বাড়িতে বড় হয়েছে, কিন্তু দুজনের চিন্তা-ভাবনা একে অপরের থেকে একেবারে আলাদা ছিল। রাহুল তার বাড়ির দারিদ্র্য, ঝগড়া এবং কষ্ট দেখে এটা মেনে নিয়েছিল যে তার জীবন আর কখনো ভালো হতে পারে না। সে পড়াশোনা থেকে মন সরিয়ে নিয়ে খারাপ সঙ্গে মিশে গেল। তার মনে হয়েছিল যখন সবকিছু আগে থেকেই ঠিক করা আছে, তখন পরিশ্রম করে কোনো লাভ নেই। অন্যদিকে, মনোজও একই পরিস্থিতি দেখেছিল কিন্তু সে তার বাবার অভ্যাস থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে সে কিছু আলাদা করবে। সে পড়াশোনায় মন দিল, কাজও করল এবং নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার চেষ্টা করল। একই পরিবেশে বেড়ে ওঠা দুই ভাই — কিন্তু একজনের চিন্তা তাকে নিচে নামিয়ে দিল এবং অন্যজনের চিন্তা তাকে উপরে তুলে দিল।

রাহুলের পতনশীল ভবিষ্যৎ

রাহুলের জীবন ধীরে ধীরে ভুল পথে যেতে শুরু করল। সে পড়াশোনা ছেড়ে দিল এবং খারাপ সঙ্গে মিশে গেল। ছোটবেলায় সে তার বাড়িতে যা দেখেছিল — মদ্যপ বাবা, রাগে ভরা পরিবেশ, দায়িত্ব থেকে পালানো — সেই সবই সে নিজের জীবনে অনুসরণ করতে শুরু করল। সে প্রায়ই বলত, 'যখন কপালই খারাপ, তখন মেহনত করে কী হবে?' এই চিন্তা তাকে আরও নীচে নামিয়ে দিল। তার এই ভাবনা তাকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে থাকল। সে নিজেকে পরিস্থিতির শিকার মনে করল এবং নিজের জীবনকে উন্নত করার কোনো চেষ্টাই করল না। ধীরে ধীরে সে সেই মানুষটাই হয়ে গেল, যা সে তার বাবাকে ছোটবেলায় দেখত। সে নিজেকে সেই ছায়া থেকে আলাদা করতে পারল না, বরং তারই অংশ হয়ে গেল।

মনোজের সংগ্রামের যাত্রা

মনোজ ছোটবেলা থেকেই সংসারের দারিদ্র্য এবং কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছিল। কিন্তু সে মনে মনে স্থির করেছিল যে সে নিজের ভাগ্য নিজেই পরিবর্তন করবে। স্কুলের পরে সে জমিতে কাজ করত, দিনমজুরি করত এবং রাতে পড়াশোনা করত। সে ছোটখাটো কাজ থেকে টাকা জমিয়ে নিজের কলেজের মাইনে ভরেছিল। তার জন্য প্রতিদিন ছিল এক একটি সংগ্রাম, কিন্তু সে কখনো আশা ছাড়েনি। ধীরে ধীরে তার পরিশ্রম ফল দিতে শুরু করল। পড়াশোনা শেষ করার পরে সে শহরে একটি চাকরি পেল এবং তারপর সে তার বাবা-মাকে গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এল, যাতে তারা ভালো জীবন কাটাতে পারে। মনোজের জীবন সহজ ছিল না, কিন্তু সে প্রতিটি বাধাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং কখনো হার মানেনি। তার এই গল্প আমাদের শেখায় যে পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্প থাকলে যে কোনো স্বপ্ন সত্যি হতে পারে।

চিন্তার প্রভাব: একটি প্রশ্ন, দুটি উত্তর

একদিন একজন মনোবিজ্ঞানী দুই ভাইকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, 'আজ তোমরা যা, তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ কী?' রাহুল কোনো চিন্তা না করেই উত্তর দিল, 'আমার বাবা। তিনি কখনো আমাদের ভালোবাসেননি, সবসময় রেগে থাকতেন। আমি আজ যা, সেই পরিস্থিতির কারণেই হয়েছি।' সে তার পরিস্থিতি এবং শৈশবকে তার ব্যর্থতার কারণ হিসেবে মেনে নিল। অন্যদিকে মনোজ একই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলল, 'আমার বাবা। তিনি আমাকে দেখিয়েছেন যে একজন মানুষের কেমন হওয়া উচিত নয়। তার কারণেই আমি মনে মনে স্থির করেছিলাম যে আমি তার মতো হব না।' দুই ভাইয়ের উত্তর শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। একই বাড়ি, একই বাবা, কিন্তু চিন্তার পার্থক্য পুরো জীবন পরিবর্তন করে দেয়।

জীবনের বাস্তবতা: পরিস্থিতি নয়, চিন্তা বদলাও

যদি জীবনে পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে এটা মেনে নেওয়া সহজ যে আমরা কিছু করতে পারব না। কিন্তু আসলে, আমাদের চিন্তাই আমাদের এগিয়ে যেতে বা পিছিয়ে আসতে বাধ্য করে। রাহুল এবং মনোজ দুজনেই একই রকম দুঃখ দেখেছিল, কিন্তু মনোজ মনে মনে স্থির করেছিল যে সে তার পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দেখাবে। সে কষ্টগুলোকে সিঁড়ি বানিয়ে তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে গেল। অন্যদিকে, রাহুল সেই একই পরিস্থিতি দেখে হার মেনে নিল এবং পরিস্থিতিকে নিজের দুর্বলতা বানিয়ে নিল। এর থেকে আমরা শিখতে পারি যে পরিস্থিতি আমাদের পরিবর্তন করে না, আমাদের চিন্তা পরিবর্তন করে। যদি আপনি মনে করেন যে আপনাকে কিছু ভালো করতে হবে, তাহলে কোনো বাধাই আপনাকে আটকাতে পারবে না।

অনুপ্রেরণা যা সবসময় সাথে থাকে

যদি আপনিও কখনো জীবনে ক্লান্ত হয়ে যান, হার মানতে ইচ্ছে করে বা মনে হয় যে আর কিছু হতে পারে না, তাহলে এই গল্পটি মনে রাখবেন। রাহুল এবং মনোজ দুজনেই একই রকম পরিস্থিতি দেখেছিল, কিন্তু দুজনে আলাদা আলাদা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একজন পরিস্থিতিকে অজুহাত বানিয়েছিল, আর অন্যজন তাকে পরিবর্তনের উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছিল। জীবনে সবাই দুটো রাস্তা পায় — হয় পরিস্থিতিকে দোষারোপ করতে থাকুন, অথবা পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য নিজে লিখুন। আসল পার্থক্য আমাদের চিন্তায়। যদি চিন্তা শক্তিশালী হয়, তাহলে কোনো বাধাই বড় নয়।

আপনার অতীত যতই খারাপ হোক না কেন, সেটি আপনার ভবিষ্যতের ফয়সালা করে না। যদি পরিস্থিতি কঠিন ছিল, তবে তাকে অজুহাত বানাবেন না, বরং তার থেকে কিছু শিখুন। রাহুল এবং মনোজের মতো, জীবন সবাইকে দুটি পথ দেয় — একটি হার মানার, এবং একটি এগিয়ে যাওয়ার। পার্থক্য শুধু চিন্তার। যদি মন শক্তিশালী হয়, তাহলে যেকোনো পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। মনোজ সেই একই পরিবেশ দেখেছিল যা রাহুল দেখেছিল, কিন্তু সে হার মানেনি। আজ আপনিও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আপনাকে কী হতে হবে — পরিস্থিতির শিকার নাকি সাফল্যের উদাহরণ। এখন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।

Leave a comment