রায় ঘোষণা সুপ্রিম কোর্টের, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত
পশ্চিমবঙ্গের উপাচার্য সংকটে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চূড়ান্ত হলো রবীন্দ্রভারতী ও পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ। রাজ্য সরকার ও আচার্য–রাজ্যপালের টানাপোড়েনের আবহে এই নিয়োগ এখন নজরকাড়া সিদ্ধান্ত।
সোনালি ও সঞ্চারী পেলেন উপাচার্যের দায়িত্ব
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হলেন বর্তমান বারাসতের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পেলেন অধ্যাপিকা সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের সুপারিশকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যপালকে এই দুই নিয়োগে সম্মতি দেওয়ার পরামর্শ দেয়।
৩৬টির মধ্যে ২০টির নিয়োগ সম্পন্ন, ১৬টিতে এখনও জট
রাজ্যের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইতিমধ্যেই ২০টিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। এ দিন দুই নতুন নিয়োগের ফলে বাকি রইল ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে যাদবপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এখনও নেতৃত্বশূন্য। পরিস্থিতির সমাধানে সুপ্রিম কোর্টই দায়িত্ব দিল বিশেষ কমিটিকে।
শীর্ষ আদালতের ভরসা প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির উপর
বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ আগেই দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে। এই কমিটিই এখন বাকি ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বেছে সুপ্রিম কোর্টকে রিপোর্ট দেবে।
‘ললিতের চেয়ে উপযুক্ত কেউ নেই’ — জানাল আদালত
শুনানিতে আদালত স্পষ্ট জানায়, বিচারপতি ললিত সমস্ত প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের যোগ্যতা সম্পর্কে জানেন এবং কার কাকে নিয়োগ করা উচিত, সে বিষয়ে তিনিই সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তাই তাঁর কমিটির সুপারিশই হবে চূড়ান্ত।
মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দই চূড়ান্ত নয়, মত রাজ্যপালপক্ষের
আচার্য রাজ্যপালের পক্ষের আইনজীবী বেঙ্কটরামানি বলেন, “শুধু মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দেই উপাচার্য হতে হবে, এমন নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশাসনিক দক্ষতা বিবেচনায় রাখতে হবে।” সুপ্রিম কোর্টও জানায়, এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও আচার্য দুই পক্ষের মতামত খতিয়ে দেখবেন বিচারপতি ললিত।
রাজ্যের আইনজীবীর সওয়াল, ‘ললিতই ঠিক করুন’
জয়দীপ গুপ্ত, রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী, বলেন, “আমরা চাই বিচারপতি ললিতই সিদ্ধান্ত নিন। মতানৈক্য হলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।” সুপ্রিম কোর্ট তাতেই সায় দিয়ে জানায়, ললিত কমিটি ‘অর্ডার অফ প্রেফারেন্স’ মানবেন কি না, তা ঠিক করবেন।
জট কাটাতে দ্রুততার নির্দেশ, চার সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে হবে
আদালত নির্দেশ দেয়, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ সম্পূর্ণ করার উপরেই জোর দিয়েছে বেঞ্চ। ফলে আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব কাঠামোয় বড় বদলের সম্ভাবনা তৈরি হলো।
কেন তৈরি হয়েছিল এই জট, পেছনের কাহিনি কী?
জানা যায়, গত কয়েক মাসে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো তালিকায় রাজ্যপাল সিলমোহর দেননি, বরং একাধিক ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগে সম্মতি দেন। এতে রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে তৈরি হয় প্রবল সংঘাত। শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপেই সেই জট এখন অনেকটাই কাটার পথে।
সর্বোচ্চ আদালতের নজরদারিতে নিয়োগে স্বচ্ছতা আশা শিক্ষামহলে
শিক্ষাজগতে আশার সঞ্চার করেছে সুপ্রিম কোর্টের এই হস্তক্ষেপ। একাধিক শিক্ষাবিদ মনে করছেন, বিচারপতি ললিতের নেতৃত্বে যদি স্বচ্ছ ও যোগ্যতা নির্ভর প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়, তবে তা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক বার্তা হবে।