বর্ষায় জলজট আর ডিভিসির জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গ প্লাবিত, ভোগান্তিতে চাষি ও ক্রেতা উভয়েই
চলতি বর্ষায় দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না রাজ্যবাসীর। টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যে চলছে একটানা বর্ষণ। তার সঙ্গে রয়েছে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের দাপট। জল থইথই অবস্থার মধ্যে ডিভিসির জল ছাড়ায় কয়েকটি জেলার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্তত চারটি জেলা ইতিমধ্যেই বন্যার জলে বিপর্যস্ত।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আশঙ্কা, বাড়বে বৃষ্টির দাপট, আরও সংকটে কৃষি
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, নিম্নচাপ আরও সক্রিয় হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। তার জেরে আগামী ক'দিন দুই বঙ্গেই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। এই টানা বর্ষণের জেরে রাজ্যের বহু চাষের জমি জলের নিচে চলে গিয়েছে। কোথাও আবার জল জমে গাছের গোড়া পচে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এর ফলেই স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আনাজ উৎপাদন।
জমিতে জল, গাছ পচে যাচ্ছে—ফলন মুখ থুবড়ে পড়ায় বাজারে উর্ধ্বগতি অব্যাহত
জমিতে জল জমে যাওয়ায় বহু সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেসব গাছ টিকে রয়েছে, সেগুলির ফলন হচ্ছে প্রায় তলানিতে। সপ্তাহখানেক আগেই যে মূল্যবৃদ্ধির সূত্রপাত হয়েছিল, তার কোনও বিরাম নেই—বরং প্রতি দিন তা নতুন উচ্চতা ছুঁচ্ছে। একদিকে জমির ফলন নেই, অন্যদিকে বাজারে চাহিদা অপরিবর্তিত—এই চক্রেই আটকে পড়েছে আনাজের দাম।
কলকাতার বাজারে ভিন্ রাজ্যের ভরসা, তাতেও কাবু হচ্ছে না মূল্যবৃদ্ধি
স্থানীয় উৎপাদন ঘাটতির ফলে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বহু বাজারে আনাজ আমদানি করা হচ্ছে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা থেকে। তবে রেলের পরিবহন ব্যয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে সেই আমদানির সুবিধাও দাম কমাতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পণ্য এলেও তা পর্যাপ্ত নয়, ফলে দাম একেবারে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।দুই মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়ায় ব্যাপক ক্ষতি, সবজির আকাল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে
নদিয়া ও দুই ২৪ পরগনার বৃষ্টির কোপে চাষ, ধাক্কা খাচ্ছে রাজ্যের সামগ্রিক সরবরাহ
উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে খবর, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন চাষের জমিতে অতিবৃষ্টির ফলে ফলন মার খেয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, বারুইপুর ও সোনারপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া, গোপালনগর এলাকায় আনাজের উৎপাদন প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চলগুলি মূলত কলকাতার বাজারে সবজি জোগানের মূল উৎস।
চাহিদা-জোগানের সমতা ভেঙে পড়ায় বাজারে হাহাকার, সামনে আরও কঠিন সময়ের আশঙ্কা
বাজারে যেটুকু আনাজ আসছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়ছে। শহর কলকাতার বাজারে পটল ৭০–৮০ টাকা কেজি, ঝিঙে ৯০ ছুঁইছুঁই, আর করলা ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ক্রেতারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন—বৃষ্টি না কমলে পরিস্থিতি আর ঠিক হবে না। এই দাম আরও বাড়তে পারে।
বৃষ্টি আশীর্বাদ, অতিবৃষ্টি অভিশাপ! কৃষি বাঁচাতে প্রশাসনিক পরিকল্পনা জরুরি
বর্ষা চাষের পক্ষে আশীর্বাদ হলেও, লাগাতার অতিবৃষ্টি হয়ে উঠেছে অভিশাপ। রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা যখন জলমগ্ন, তখন কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোই একমাত্র উপায়। বাজারের স্থিতাবস্থা ফেরাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, চটজলদি ক্ষতিপূরণ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া উপায় নেই। না হলে আরও বাড়বে ভোগান্তি।