বৃষ্টিতে ভিজছে বাংলা, টানা নিম্নচাপের জোড়া প্রভাব!
গত কয়েকদিন ধরেই দক্ষিণবঙ্গে চলছে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি। সকাল-সন্ধ্যে ঘন মেঘের চাদরে ঢাকা থাকছে আকাশ। কখনও ঝোড়ো হাওয়া, তো কখনও বজ্রবিদ্যুৎ—পুরো দক্ষিণাঞ্চল যেন বর্ষার ছায়ায় আচ্ছন্ন। এরই মাঝে উত্তরবঙ্গে চলছে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি, যেখানে টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অক্ষরেখা এবং ঘূর্ণাবর্ত—বর্ষার পেছনের নেপথ্য কারণ
বর্তমানে মৌসুমী অক্ষরেখা অবস্থান করছে হিমালয়ের পাদদেশে। জলপাইগুড়ির উপর দিয়ে এই রেখা বিস্তৃত হয়েছে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত। মধ্য বাংলাদেশে সক্রিয় একটি ঘূর্ণাবর্ত, আর নতুন করে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে দক্ষিণ বাংলাদেশে। এই অক্ষরেখা বিহার হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাজ্যে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে। এর ফলেই আগামী কয়েকদিন বাংলাজুড়ে দেখা যাবে ‘ওয়াইড স্প্রেইড রেইন’ বা বিস্তৃত বৃষ্টিপাত।
দক্ষিণবঙ্গে আজ এবং আগামীকালের পূর্বাভাস: ৯ জেলায় সতর্কতা
আজ, বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। আগামীকাল, শুক্রবার পশ্চিমের জেলাগুলিতে বৃষ্টির দাপট আরও বাড়তে পারে। তবে শনিবার থেকে ধীরে ধীরে কমবে বৃষ্টিপাত, যার জায়গায় মাথাচাড়া দেবে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি—যা এই মৌসুমে শহরবাসীর কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
ঘনঘটায় মুড়ে থাকা কলকাতা, হালকা বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা
রাজ্যের রাজধানী কলকাতাতেও আকাশ থাকবে মূলত মেঘলা। আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ একাধিক এলাকায় হতে পারে কিছুটা ঝড়ো হাওয়া, যার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিমি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য এতটাই বেশি যে বৃষ্টি না হলে তীব্র গুমোট পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আগামীকাল থেকে বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে শহরে।
উত্তরবঙ্গে ধেয়ে আসছে অতি ভারী বর্ষণের ঢল! দুর্যোগে দার্জিলিং-কালিম্পং
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে জারি করা হয়েছে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। কোচবিহারে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা। পাশাপাশি মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দমকা ঝোড়ো হাওয়া সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বিশেষ করে দার্জিলিং থেকে জলপাইগুড়ি—এই পাঁচটি জেলায় আগামী ৪ থেকে ৫ দিন প্রবল বর্ষণ চলবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
কলকাতার তাপমাত্রা সামান্য কম, তবু গুমোটে হাঁসফাঁস অবস্থা
বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ০.৫ মিলিমিটার, তবে তীব্র জলীয় বাষ্প শহরবাসীর অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে।
আগামী কয়েকদিনের জন্য কী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে নদী সংলগ্ন এলাকায় সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। পাহাড়ি ঢলে ভূমিধসের সম্ভাবনা থেকে শুরু করে নিচু এলাকার জলাবদ্ধতা পর্যন্ত—সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গেও বজ্রবিদ্যুৎ এবং ঝোড়ো হাওয়ার সময় বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষিকাজেও এই আবহাওয়া প্রভাব ফেলতে পারে, তাই কৃষকদের জন্যও আগাম বার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।
আবহাওয়ার মূল পয়েন্টস
দক্ষিণবঙ্গে আজ ৯ জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা
উত্তরবঙ্গে ৪-৫ দিন অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
জলীয় বাষ্পের আধিক্যে বাড়বে অস্বস্তি
অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্তের কারণে সক্রিয় মৌসুমি পরিস্থিতি