নৃশংস খুনে ন্যায় বিচার, ৬ বছর পর শাস্তি ঘোষণা করল আদালত২০১৯ সালের এক নির্মম রাতে পেট্রল ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত জয়ন্ত ঘোষকে অবশেষে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। শুক্রবার, আসানসোল ফাস্ট ট্র্যাক সেকেন্ড কোর্টের বিচারক মহুয়া বসু রায় তাঁর সাজা ঘোষণা করেন—আজীবন কারাবাস ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা।
বারাবনি থেকে শুরু অগ্নিকাণ্ডের মর্মান্তিক কাহিনি
ঘটনাটি ঘটেছিল পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনি থানা এলাকায়। পৃথা ঘোষ নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল অগ্নিদগ্ধ অবস্থায়। প্রথমে অস্পষ্ট মনে হলেও তদন্তে উঠে আসে গৃহবিবাদের জেরে স্বামী জয়ন্তের পৈশাচিক পরিকল্পনার গল্প। ওই ঘটনায় পুলিশের তরফে গ্রেফতার করা হয় জয়ন্ত ঘোষকে।
১২ জন সাক্ষীর গলার আওয়াজেই সাজা পেল খুনি স্বামী
এই মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষী আদালতে নিজের বক্তব্য রাখেন। আলামত, ফরেনসিক রিপোর্ট এবং পৃথার মৃত্যুশয্যার জবানবন্দি মিলে এক সুস্পষ্ট পথ দেখায় বিচারপতির সামনে। বৃহস্পতিবার জয়ন্ত ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করার পর শুক্রবার চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা করা হয়।
শেষ দিনের গলায় আলাপ, তারপরই চিরবিদায়
আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পৃথা ও জয়ন্তের মধ্যে ঝগড়া চরমে ওঠে। সেই ঝগড়ার পরেই জয়ন্ত গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পৃথাকে। পৃথার শেষ জবানবন্দিই হয়ে ওঠে মামলার মোক্ষম চাবিকাঠি।
মৃত্যুশয্যার জবানবন্দি—ন্যায়ের পথের পাথেয়
পৃথা ঘোষ হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন—স্বামীই তাঁকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছেন। সেই জবানবন্দির প্রমাণ আদালতের কাছে হয়ে ওঠে বেদনার দলিল। নিঃশ্বাস-শেষে বলে যাওয়া কথাই চিহ্নিত করে দেয় স্বামী জয়ন্তকে এই হত্যার নেপথ্য নায়ক হিসেবে।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বার্তা—‘ন্যায় অবশেষে জয়ী’
এই রায়ে ফের একবার স্পষ্ট, নারী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধে কোনো রকম ছাড় নেই। আসানসোল আদালতের এই রায় শুধু পৃথার পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের কাছে একটি বার্তা—ন্যায় দেরিতে হলেও আসে, আর অপরাধীর জন্য অপেক্ষা করে শাস্তি।