১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল: গ্রেপ্তার হলেই পদত্যাগ, নতুন পথে রাজনীতি

১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল: গ্রেপ্তার হলেই পদত্যাগ, নতুন পথে রাজনীতি

লোকসভায় পেশ হওয়া ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। বিল অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তার হলে পদ থেকে সরে যাবেন। এই নিয়ম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

Amendmen Bill 2025: লোকসভায় বুধবার রাজনীতি সংশ্লিষ্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল ২০২৫ পেশ করেছেন। এই বিল অনুসারে, যদি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্যের কোনো মন্ত্রী কোনো ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হন, তবে তাঁকে অবিলম্বে পদ থেকে সরে যেতে হবে। সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ রাজনীতিতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মন্ত্রীরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন

এই বিলের পরিধি শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর অধীনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এমনকি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীরাও গ্রেপ্তারের পরিস্থিতিতে পদে থাকতে পারবেন না। এই বিধানের মূল উদ্দেশ্য হল কোনো নেতাই যাতে তাঁর পদ ব্যবহার করে তদন্তকে প্রভাবিত করতে না পারেন।

বিলটির গুরুত্ব

ভারতে এখনও পর্যন্ত এমন কোনো আইনি বিধান ছিল না, যার অধীনে মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তারের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকবেন। বহুবার এমন হয়েছে যে নেতারা জেলে গেছেন, কিন্তু তাঁরা তাঁদের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক এবং নৈতিক উভয় স্তরেই প্রশ্ন তুলেছে। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল এই ত্রুটি দূর করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সংসদে আর কী কী বিল পেশ করা হয়েছে

সংসদের বর্তমান অধিবেশনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল ২০২৫ ছাড়াও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সংশোধনী বিল ২০২৫, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন সংশোধনী বিল ২০২৫ এবং অনলাইন গেমিং সম্পর্কিত নতুন বিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সমস্ত বিল নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে এবং অনুমোদন পাওয়ার পরে এগুলি কার্যকর করা হবে।

গ্রেপ্তারের পরে পদত্যাগ করা জরুরি কেন

সরকার এই বিলটি পেশ করার সময় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে গ্রেপ্তারের পরে পদত্যাগ বাধ্যতামূলক হওয়া কেন জরুরি। প্রথম কারণ হল পদে বহাল থাকলে তদন্ত নিরপেক্ষ হয় না। দ্বিতীয় কারণ হল পদে থাকা নেতা তদন্তকারী সংস্থা বা কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। তৃতীয় কারণ হল তাঁরা সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। চতুর্থ কারণ হল প্রমাণের সাথে কারচুপি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্ত কারণে এই বিধানটি জরুরি বলে মনে করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে শিক্ষা

গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা সামনে এসেছে যখন মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু তিনি জেলে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। এই ঘটনা রাজনীতি এবং নৈতিকতা নিয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।

অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি পদে থাকাকালীন পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একইভাবে, দিল্লির প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই ঘটনাগুলি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে রাজনৈতিক পদ এবং গ্রেপ্তারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন।

Leave a comment