শ্রাবণ মাস শেষ হওয়ার আগে এই ৫টি জিনিস বাড়িতে আনলে মহাদেবের কৃপা লাভ হয়

শ্রাবণ মাস শেষ হওয়ার আগে এই ৫টি জিনিস বাড়িতে আনলে মহাদেবের কৃপা লাভ হয়

শ্রাবণ মাসটি সারা ভারতে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের মাস হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে ভগবান শিবের পূজা ও কৃপা লাভের জন্য এই সময়টি অত্যন্ত শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। এই পবিত্র মাসটি এই বছর ৯ই আগস্ট শ্রাবণ পূর্ণিমার দিনে শেষ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শিব ভক্তদের জন্য এই শেষ কয়েক দিন অত্যন্ত বিশেষ বলে মনে করা হচ্ছে।

পৌরাণিক বিশ্বাস ও ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, শ্রাবণ মাসে কিছু বিশেষ জিনিস বাড়িতে আনলে ঘরে ইতিবাচক শক্তি আসে এবং ভোলেনাথের বিশেষ কৃপা লাভ হয়। এখানে আমরা আপনাকে এমন পাঁচটি পবিত্র বস্তুর কথা বলছি, যা শ্রাবণ মাস শেষ হওয়ার আগে আপনি নিজের বাড়িতে আনতে পারেন।

শিবজির প্রিয় ভস্ম বাড়িতে আনুন

ভগবান শিবের কাছে ভস্ম অত্যন্ত প্রিয়। ভস্মকে ভগবান শিবের শরীরে লাগানো ভস্মের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা বৈরাগ্য, শক্তি ও সামর্থ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান শিব স্বয়ং শ্মশানে বাস করেন এবং সেখানকার ভস্ম নিজের শরীরে লাগান।

শ্রাবণ মাসে কোনো পবিত্র শিব মন্দির থেকে এনে যদি আপনি ভস্ম নিজের বাড়িতে রাখেন, তবে এটি শুধু মানসিক শক্তি প্রদান করে না, সেই সঙ্গে ঘরে থাকা নেতিবাচক শক্তিকেও শেষ করে দেয়। বাড়িতে রাখা ভস্ম পূজার স্থানে রাখাই সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।

তামা বা পিতলের নতুন জলের পাত্র আনা শুভ

ভগবান শিবকে জল অর্পণ করা সবচেয়ে বড় পূজার কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। শ্রাবণে প্রতিদিন শিবলিঙ্গে জল নিবেদনের প্রথা প্রচলিত আছে। এই শুভ কাজকে আরও ফলপ্রসূ করার জন্য এই মাসে একটি নতুন জলের পাত্র অবশ্যই বাড়িতে আনা উচিত।

এই পাত্র তামা, পিতল বা রূপার হতে পারে। শ্রাবণ মাসে আনা নতুন পাত্র যখন শিবলিঙ্গে জল নিবেদনের কাজে লাগে, তখন এটি আপনার ঘরে সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদের পথ খুলে দেয়। এই পাত্র শুধুমাত্র পূজার কাজে ব্যবহার করা উচিত এবং অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়।

রুদ্রাক্ষ বাড়িতে আনলে মানসিক শান্তি হয়

রুদ্রাক্ষকে ভগবান শিবের অশ্রু থেকে উৎপন্ন বলে মনে করা হয়। এটি কেবল আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে না, সেই সঙ্গে শরীর ও মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করা হয়।

শ্রাবণে রুদ্রাক্ষ এনে এটিকে ঘরের পূজার স্থানে রাখুন বা পরুন। এতে আপনার ঘরে ইতিবাচকতা বজায় থাকে এবং মানসিক চাপ দূর হয়। অনেকে এটি গলা বা হাতে ধারণ করেন, তবে ঘরের মন্দিরেও এটিকে পবিত্রতার সঙ্গে রাখা যেতে পারে।

মহামৃত্যুঞ্জয় যন্ত্র থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়

মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রকে ভগবান শিবের সবচেয়ে শক্তিশালী মন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত মহামৃত্যুঞ্জয় যন্ত্র অত্যন্ত প্রভাবশালী যন্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। শ্রাবণের পবিত্র মাসে এই যন্ত্রটি বাড়িতে আনা এবং পূজার স্থানে স্থাপন করা শুভ সঙ্কেত বলে মনে করা হয়।

বিশ্বাস করা হয় যে এই যন্ত্র নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করে, দুর্ভাগ্য থেকে বাঁচায় এবং জীবনে আসা সংকট কম করে। এই যন্ত্র বিশেষভাবে সেই সব মানুষের জন্য উপযোগী, যারা শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অথবা জীবনে বার বার বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

ডমরু বাড়িতে আনলে নেতিবাচকতা দূর হয়

ডমরু ভগবান শিবের প্রধান বাদ্যযন্ত্র, যা তিনি তাণ্ডব করার সময় বাজান। এটিকে মহাজাগতিক শক্তির প্রতীক হিসেবেও মনে করা হয়। শ্রাবণ মাসে ডমরু ঘরে আনলে ঘরে ছড়িয়ে থাকা নেতিবাচক শক্তি শেষ হয়ে যায়।

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, ডমরুর ধ্বনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশের ত্রয়ীর শক্তিকে জাগ্রত করে। এটিকে বাড়িতে পূজার স্থানের কাছে রাখা শুভ বলে মনে করা হয়। এটি কেবল আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করে না, সেই সঙ্গে পরিবারে মেলবন্ধন ও বোঝাপড়া বাড়ায়।

পূজা বিধির প্রতি খেয়াল রাখুন

এই পবিত্র জিনিসগুলি বাড়িতে আনার পাশাপাশি এদের পূজা বিধি ও স্থাপনের প্রতিও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এই জিনিসগুলি আনার সময় শুদ্ধতা, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।

যদি সম্ভব হয়, তাহলে বাড়িতে আনার আগে শিব মন্দিরে গিয়ে এই জিনিসগুলি ভগবান শিবের চরণে অর্পণ করুন এবং তারপর সেগুলোকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসুন। এমনটা করলে এই জিনিসগুলিতে পবিত্র শক্তির সঞ্চার হয়, যা পুরো বাড়ির জন্য উপকারী।

শিবভক্তি সম্পর্কিত প্রতিটি কাজই শুভ ফলদায়ক

শ্রাবণ মাস শুধু ব্রত ও পূজার নয়, বরং শিবের প্রতি সমর্পণ, সেবা ও ধ্যানের মাস। এমন পরিস্থিতিতে এই জিনিসগুলি এনে যদি সত্যিকারের মন দিয়ে ভগবান শিবের আরাধনা করা হয়, তবে ভক্ত মানসিক, পারিবারিক ও আধ্যাত্মিক - প্রতিটি স্তরেই উপকৃত হতে পারে।

যেহেতু শ্রাবণ মাসের সমাপ্তি ক্রমশ এগিয়ে আসছে, তাই শিবভক্তদের মধ্যে ভক্তি ও উৎসাহ আরও বাড়ছে। এই পবিত্র সময়ে এই পাঁচটি জিনিস যদি বাড়িতে আনা যায়, তবে এটি পুরো পরিবেশকে ইতিবাচক শক্তিতে ভরিয়ে তুলতে পারে এবং শিবের কৃপা অনুভব করায়।

Leave a comment