আমেরিকার বিখ্যাত ট্রেডিং কোম্পানি জেন স্ট্রিটের বিরুদ্ধে ভারতীয় শেয়ার বাজারে সন্দেহজনকভাবে বিপুল মুনাফা করার অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে যখন ভারতীয় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি কোম্পানির ডেরিভেটিভ ট্রেডিং কার্যক্রমের গভীরভাবে তদন্ত শুরু করে। সেবির রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কোম্পানিটি জানুয়ারি ২০২৩ থেকে মে ২০২৫-এর মধ্যে ভারতে ট্রেডিং করে প্রায় ৪.২৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই আয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে নাকি এতে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে।
ইনকাম ট্যাক্স বিভাগের তদন্ত শুরু
এই মামলায় এখন আয়কর বিভাগও সক্রিয় হয়েছে। বিভাগটি জেন স্ট্রিটের ভারতে অবস্থিত অফিস এবং এর অংশীদার নুয়ামা ওয়েলথের কার্যক্রমের তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের অধীনে কোম্পানিটির কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ও ডেটা চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু রিপোর্ট অনুযায়ী জেন স্ট্রিট এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করেনি।
ভারতে প্রয়োজনীয় নথি নেই
সরকারি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেন স্ট্রিট আয়কর কর্মকর্তাদের কাছে যে নথিগুলি সরবরাহ করার কথা ছিল, সেগুলি হয় জমা দেওয়া হয়নি অথবা বলা হয়েছে যে সেগুলি ভারতে নেই। কোম্পানির সার্ভার দেশের বাইরে অবস্থিত এবং এর ডেটা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নাগালের বাইরে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি কোম্পানির অ্যাকাউন্ট বুকও ভারতে রাখা হয়নি, যেখানে আইন অনুযায়ী, যদি কোনো কোম্পানি ভারতে ব্যবসা করে, তবে তাকে তার হিসাব-নিকাশের রেকর্ড ভারতে রাখা বাধ্যতামূলক।
কর্মচারীদের মনোভাবও ঢিলেঢালা
তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন যে শুধু নথিই নয়, কোম্পানির স্থানীয় কর্মীদের আচরণও সহযোগী নয়। অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকার পরেও কর্মীরা হয় প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিচ্ছেন না অথবা এড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করতে অসুবিধা হচ্ছে।
সেবি আগেই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল
এই পুরো ঘটনার শুরু ভারতীয় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির পদক্ষেপের মাধ্যমে। সেবি জুলাই মাসের শুরুতে জেন স্ট্রিটের ভারতে ট্রেডিং কার্যক্রমের উপর সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেবির অভিযোগ ছিল যে কোম্পানিটি ডেরিভেটিভস ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বাজারে গোলযোগ সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে শুধু অন্যান্য বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, বাজারের স্বচ্ছতার উপরও প্রভাব পড়েছে।
নুয়ামা ওয়েলথের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে
জেন স্ট্রিট ভারতে একা কাজ করছিল না। স্থানীয় অংশীদার হিসেবে নুয়ামা ওয়েলথ নামক একটি সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। আয়কর বিভাগ এখন এই সংস্থার ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে। কর্মকর্তাদের মতে, এটা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে যে কোম্পানিটির বিদেশি সার্ভার, নথি বা আর্থিক রেকর্ডে নুয়ামার কতটা প্রবেশাধিকার ছিল এবং তারা ভারতে জেন স্ট্রিটের পক্ষে কোনো সন্দেহজনক ভূমিকা পালন করেছে কিনা।
ডেটা অ্যাক্সেস নিয়ে প্রশ্ন
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কোম্পানির সার্ভার এবং ডেটা ভারতের বাইরে রয়েছে এবং এর উপর ভারতীয় আইনের সরাসরি প্রভাব নেই। এতে আয়কর বিভাগের তদন্ত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি, কোম্পানি কর্তৃক ডেটা স্থানান্তরে বিলম্ব এবং বারবার টালবাহানা করায় সময় মতো তদন্ত শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিদেশি কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিয়ে বিতর্ক
এই ঘটনাটি আবারও এই প্রশ্ন তুলেছে যে যখন বিদেশি কোম্পানিগুলো ভারতে ব্যবসা করে, তখন ভারতীয় আইনের অধীনে তাদের দায়বদ্ধতা কতটা শক্তিশালী। জেন স্ট্রিটের আচরণ এই মুহূর্তে ভারতীয় সংস্থাগুলোর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগেও অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে ভারতে ট্যাক্স সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে তদন্ত দীর্ঘ সময় ধরে চলছে।
ভারতের বিনিয়োগকারীদের নজর এই মামলার দিকে
এই মামলা এখন শুধু কর কর্মকর্তা বা সেবির তদন্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শেয়ার বাজারে সক্রিয় ছোট ও বড় বিনিয়োগকারীদেরও নজর রয়েছে এই পুরো ঘটনার উপর। জেন স্ট্রিটের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তদন্তের ধীর গতি নিয়ে বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন যে এর প্রভাব বাজারের অন্যান্য কার্যকলাপের ওপর পড়তে পারে।