পাকিস্তান-পন্থী আজারবাইজান এবার রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে। বিমান দুর্ঘটনা, পুলিশি অভিযান এবং স্পুটনিক অফিসে হানার ঘটনা সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। ইউক্রেনের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আজারবাইজান-রাশিয়া উত্তেজনা: আজারবাইজান, যারা একসময় ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছিল, এখন নিজেই একটি বড় আন্তর্জাতিক উত্তেজনার শিকার। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়েছে যে উভয় দেশ একে অপরের নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই ঘটনাগুলি আঞ্চলিক কূটনীতিতে একটি নতুন মোড় এনে দিয়েছে।
আজারবাইজান-পাকিস্তান-তুরস্ক অক্ষ এবং ভারত বিরোধিতা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলাকালীন আজারবাইজান প্রকাশ্যে পাকিস্তানের সমর্থন করেছিল। তুরস্ক, পাকিস্তান এবং আজারবাইজানের ত্রিপক্ষীয় জোট ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক বিবৃতি দিচ্ছিল। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে আজারবাইজান বহুবার পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু এখন যখন তারা নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছে, তখন তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে।
রাশিয়া-আজারবাইজান সংঘর্ষের সূত্রপাত
রাশিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয় ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে। আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবিমান, যা বাকু থেকে গ্রোজনী (চেচনিয়া) যাচ্ছিল, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কাসাকস্তানে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হন।
রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনাটিকে "দুর্ভাগ্যজনক" বলে অভিহিত করে আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি এই দুর্ঘটনার জন্য কোনো দায় স্বীকার করেননি। আলিয়েভ এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ করেন।
আলিয়েভ রাশিয়ার সফর করতে অস্বীকার করেন
এই ঘটনার পর, মে, ২০২৫ সালে রাশিয়া আলিয়েভকে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, কিন্তু তিনি সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর জুনে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আজারবাইজান সফর পরিস্থিতিকে আরও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে।
আজারবাইজানি নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পদক্ষেপ
২৭শে জুন, রাশিয়ার ইয়েকাটেরিনবার্গ শহরে আজারবাইজানি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। এই অভিযানটি কয়েক দশক আগের একটি হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। অভিযানে হোসেন এবং জিয়াউদ্দিন সাফারভ নামে দুই আজারবাইজানি ভাই নিহত হন। পরে ময়নাতদন্তে জানা যায়, তাদের মৃত্যু হয় পুলিশের মারধরের কারণে। এই ঘটনার পর আজারবাইজান রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত সরকারি বৈঠক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়।
রাশিয়ান মিডিয়ার উপর আজারবাইজানের পদক্ষেপ
১লা জুলাই, আজারবাইজানের পুলিশ রাজধানী বাকুতে অবস্থিত রাশিয়ান নিউজ এজেন্সি 'স্পুটনিক'-এর অফিসে অভিযান চালায় এবং সাতজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও মাদক পাচার ও সাইবার অপরাধের অভিযোগে আটজন রুশ আইটি বিশেষজ্ঞকে আটক করা হয়। যখন তাদের মারধরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, তখন রাশিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং কঠোর পদক্ষেপের দাবি ওঠে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিশোধ
রাশিয়া দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইয়েকাটেরিনবার্গে আজারবাইজানি সম্প্রদায়ের এক নেতা ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, কীভাবে বিশেষ বাহিনী তাদের গাড়ির কাঁচ ভেঙে তাদের বের করে আনে। আজারবাইজান এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং তাদের নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে।
কূটনৈতিক সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান তিক্ততা
আজারবাইজানে রুশ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের পর, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাকুতে নিযুক্ত আজারবাইজানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায়। জবাবে আজারবাইজানও রুশ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় এবং রুশ পুলিশের অত্যাচারের তদন্ত, দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানায়।