মস্তিষ্ক হবে কম্পিউটারের মতো দ্রুত, ডায়েটে রাখুন এই চার ‘ব্রেন ফুড’

মস্তিষ্ক হবে কম্পিউটারের মতো দ্রুত, ডায়েটে রাখুন এই চার ‘ব্রেন ফুড’

শরীরের মতোই মস্তিষ্কেরও দরকার সঠিক খাদ্য; প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন ব্রকলি, বাদাম, কমলা লেবু ও ব্লুবেরি, তীক্ষ্ণ হবে চিন্তাশক্তি ও বাড়বে স্মৃতিশক্তি

মস্তিষ্কই মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র। দেহের প্রতিটি কাজের নির্দেশ আসে এই অঙ্গ থেকেই। তাই শরীর যেমন সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম দরকার হয়, তেমনই মস্তিষ্ককে তরতাজা ও সচল রাখতে প্রয়োজন সঠিক পুষ্টি। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, মানসিক চাপ, রাতজাগা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস—সব মিলিয়ে আজকাল কম বয়স থেকেই অনেকেই ভোগেন ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, মনোযোগের ঘাটতি কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতায়। এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে এবং মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের মতো দ্রুত করতে চাই চারটি বিশেষ খাবার—ব্রকলি, বাদাম, কমলা লেবু এবং ব্লুবেরি।

ব্রকলি সবুজ শক্তির ভাণ্ডার :সবুজ শাকসবজির উপকারিতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে মস্তিষ্কের জন্য বিশেষভাবে উপকারী যে সবজি, তার মধ্যে ব্রকলি অন্যতম। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং প্রচুর ভিটামিন কে। এই উপাদানগুলি মস্তিষ্কের কোষকে রক্ষা করে এবং স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভিটামিন কে যুক্ত খাদ্য গ্রহণকারীদের তুলনায় অন্যদের স্মৃতিশক্তি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। প্রতিদিন এক বাটি ব্রকলি খেলে কেবল মস্তিষ্ক নয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা পড়াশোনা করেন বা মানসিক কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাঁদের ডায়েটে ব্রকলি থাকা উচিতই।

বাদাম ছোট দানা, অগণিত গুণ :খুব অল্প জায়গা দখল করলেও বাদামের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে অসাধারণ গুণ। আমন্ড, আখরোট, কাজু কিংবা পেস্তা—সব ধরনের বাদামেই থাকে ভিটামিন ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উপাদানগুলি রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, মানসিক চাপ কমায় এবং মনোযোগ বাড়ায়। প্রতিদিন মুঠো ভর্তি বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে দেখা যায়, চিন্তা করার ক্ষমতা আরও তীক্ষ্ণ হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার গতি বাড়ে। তবে অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে—যেমন অম্বল, গ্যাস বা হজমের সমস্যা। তাই পরিমিত বাদামই হতে পারে মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক ওষুধ।

কমলা লেবু মস্তিষ্কে প্রাণ জোগায় ভিটামিন সি :শীতকাল এলেই বাজারে ছেয়ে যায় টক-মিষ্টি কমলা লেবুতে। অনেকেই ভাবেন এটি শুধু সর্দি-কাশি ঠেকায় বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু আসলে এর উপকারিতা আরও অনেক বেশি। কমলা লেবুতে থাকা ভিটামিন সি মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি এটি স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি আনে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা বারবার ভুলে যান বা মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না, তাঁদের ডায়েটে প্রতিদিন অন্তত একটি করে কমলা লেবু থাকা জরুরি। নিয়মিত এই ফল খেলে শুধু মস্তিষ্কই নয়, শরীরের ত্বক ও ইমিউন সিস্টেমও উপকৃত হয়।

ব্লুবেরি বয়সজনিত ক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল :দেখতে ছোট্ট হলেও ব্লুবেরি আসলে এক আশ্চর্যজনক ফল। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং ম্যাঙ্গানিজ—যা মস্তিষ্ককে দীর্ঘ সময় সক্রিয় ও তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ব্লুবেরি খাওয়ার অভ্যাস বয়সজনিত স্মৃতিভ্রংশ বা আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া, ব্লুবেরির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করে, ফলে মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতা বাড়ে। পুষ্টিবিদরা তাই একে ‘সুপারফুড’ বলে আখ্যা দেন। যদিও এ দেশে এটি ততটা সহজলভ্য নয়, তবে বাজারে ড্রাই ব্লুবেরি বা জ্যুস আকারে মিললেও সেটি ডায়েটে রাখা যেতে পারে।

মস্তিষ্কের জন্য এই খাবারের গুরুত্ব কেন :আজকের প্রতিযোগিতার যুগে মানসিক চাপ প্রতিটি মানুষের জীবনের অঙ্গ। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা, অফিসে কর্মীদের টার্গেটের চাপ কিংবা গৃহিণীদের সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ—সব ক্ষেত্রেই চাই দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতা ও তীক্ষ্ণ স্মৃতি। অথচ অস্বাস্থ্যকর খাবার, জাঙ্ক ফুড, অ্যালকোহল বা অতিরিক্ত ক্যাফিন মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়। ফলাফল, ভুলে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বলতা। তাই সঠিক ডায়েটই পারে এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি দিতে। ব্রকলি, বাদাম, কমলা লেবু ও ব্লুবেরি—এই চারটি খাবারকে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে মস্তিষ্ক থাকবে সতেজ, আর চিন্তার গতি হবে অনেকটা কম্পিউটারের মতো।

চিকিৎসকদের পরামর্শ :চিকিৎসকরা বলেন, সঠিক ঘুম, পর্যাপ্ত জলপান এবং নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারই হল মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার প্রধান উপায়। তাঁরা মনে করেন, ছোট বয়স থেকেই এই খাবারগুলিকে ডায়েটে রাখলে পরবর্তী সময়ে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা সহজ হয়। একই সঙ্গে মানসিক রোগ, যেমন ডিপ্রেশন বা উদ্বেগকেও অনেকাংশে দূরে রাখা যায়। তবে যাঁদের বিশেষ রোগ রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়েটে পরিবর্তন আনা উচিত।

Leave a comment