এনআইআরএফ ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্কিং ২০২৫ দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় যাদবপুরের সাফল্য কে কোথায় এগিয়ে কে পিছিয়ে

এনআইআরএফ ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্কিং ২০২৫ দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় যাদবপুরের সাফল্য কে কোথায় এগিয়ে কে পিছিয়ে

উচ্চশিক্ষার মানচিত্রে নতুন দিশা :এবারও দেশের শিক্ষাঙ্গনে নজর কাড়ল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‍্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (NIRF)। শিক্ষার মান, গবেষণার ক্ষেত্র, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সমাজে প্রভাব— সবকিছুর বিচার করেই তৈরি হয়েছে এই র‍্যাঙ্কিং। ফলে শিক্ষার্থীরা এবারও পেলেন তাঁদের জন্য সঠিক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ।

এনআইআরএফ কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ

২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এই র‍্যাঙ্কিং পদ্ধতি। প্রথম দিন থেকেই এর মূল লক্ষ্য ছিল ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি নিরপেক্ষ তালিকা তৈরি করা, যাতে তাঁরা সহজে বুঝতে পারেন কোন প্রতিষ্ঠান তাঁদের শিক্ষাজীবনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, গবেষক ও বিনিয়োগকারীরাও এই তালিকার ওপর নির্ভর করেন।

প্রতীক্ষার অবসান, ফলাফল প্রকাশ

বছরের পর বছর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অপেক্ষা করেন এই ঘোষণার জন্য। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। অবশেষে ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ঘোষণা করলেন NIRF India Rankings 2025। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো আলোচনার ঝড়— কে এগোল, কে পিছোল, আর কোন প্রতিষ্ঠান নতুন করে জায়গা করে নিল শীর্ষ তালিকায়।

শীর্ষে IISC বেঙ্গালুরু, দ্বিতীয় JNU

প্রথম স্থান দখল করেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISC), বেঙ্গালুরু। গবেষণার মান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাদানে এই প্রতিষ্ঠান বারবার প্রমাণ করেছে তাদের সক্ষমতা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (JNU), দিল্লি। বহু বিতর্ক পেরিয়েও JNU একাডেমিক ও গবেষণায় নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে।

মণিপালের উত্থান, তালিকায় জামিয়া

তৃতীয় স্থানে এসেছে মণিপাল অ্যাকাডেমি অফ হায়ার এডুকেশন। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক উন্নতি করে এবার শীর্ষ তিনে জায়গা করে নিল তারা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গবেষণা ও উদ্ভাবনী শিক্ষায় বড় সাফল্য দেখিয়েছে।

দিল্লি, বেনারস ও বিটস পিলানির অবস্থান

তালিকার মাঝামাঝি অংশও সমান চমকপ্রদ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (DU) পঞ্চম স্থানে, যা দেশের প্রাচীন ও খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (BHU), আর সপ্তম স্থানে বিআইটিএস পিলানি। প্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানগুলির অবদান উল্লেখযোগ্য।

দক্ষিণ ভারতের অমৃতার সাফল্য

অষ্টম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে অমৃতা বিশ্ব বিদ্যাপীঠ। দক্ষিণ ভারতের এই বিশ্ববিদ্যালয় বিগত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। এবারও তারা প্রমাণ করল নিজেদের মজবুত একাডেমিক অবস্থান।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব

নবম স্থানে উঠে এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গবাসীর গর্ব এই প্রতিষ্ঠান এবারও দেশের সেরা দশে জায়গা করে নিল। গবেষণা, সাহিত্যচর্চা, প্রকৌশল ও সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য দেশ-বিদেশে আলোচিত।

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ দশে

তালিকার দশম স্থানে রয়েছে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (AMU)। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ শক্তি হলো এর বিস্তৃত শিক্ষাক্ষেত্র এবং বহুমুখী ছাত্রসমাজ। এবারও তারা শীর্ষ দশে নিজেদের নাম ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও র‍্যাঙ্কিং

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এবার প্রকাশিত হয়েছে সামগ্রিক কলেজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবস্থাপনা, ফার্মেসি, চিকিৎসা, আইন, স্থাপত্য, কৃষি ও দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংও। নতুন সংযোজন হিসেবে এসেছে রাজ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রের সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে এই র‍্যাঙ্কিংয়ে।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের শিক্ষাক্ষেত্র

এই তালিকা প্রমাণ করছে, ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কেবল দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে। গবেষণার মানোন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে তারা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ও একাডেমিক সহযোগিতার পথ আরও প্রশস্ত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য পথপ্রদর্শক:অবশেষে বলা যায়, NIRF র‍্যাঙ্কিং শুধু একটি তালিকা নয়, এটি হলো শিক্ষার্থীদের জন্য এক দিশারী। কোন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলে ভালো সুযোগ আসবে, কোন ক্যাম্পাস গবেষণায় এগিয়ে— এসব তথ্য একসঙ্গে পাওয়া যায় এখানেই। ফলে উচ্চশিক্ষা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই র‍্যাঙ্কিং অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে।

Leave a comment