উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে বিজেপি আসন্ন 2027 বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি কৌশলগত মোড় নিয়ে মুসলিম ভোট ব্যাংককে নিজেদের কব্জায় আনার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। সমাজবাদী পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মুসলিম সম্প্রদায় 2022 সালের বিধানসভা এবং 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোট দিয়েছিল—প্রায় 80-85%—যা দলটিকে বড় ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। শিয়া, সুফি এবং পশ্চাদপদ মুসলিম কার্ডও ফ্লপ হয়েছে, যার ফলস্বরূপ বিজেপি এখন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে দলের ভিত্তি স্থাপন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এর জন্য, দলটি পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ভিত্তি হিসেবে নিয়েছে, যেখানে প্রাথমিক কাজ করে 2027 সালের জন্য একটি শক্তিশালী জনসমর্থন তৈরি করাই উদ্দেশ্য।
সংখ্যালঘু মোর্চা তৈরি করছে Muslim Data Bank
বিজেপির প্রস্তুতি সংখ্যালঘু মোর্চার অধীনে চলছে। উত্তরপ্রদেশে, রাজ্য সভাপতি কুনওয়ার বাসিত আলী রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে সেই গ্রামগুলি চিহ্নিত করতে শুরু করেছেন যেখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম প্রধান এবং বিডিসি সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। 57,695 টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে প্রায় 7,000 পঞ্চায়েতে ধারাবাহিকভাবে মুসলিম প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন এবং 8,000 এর বেশি বিডিসি সদস্যের মধ্যেও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাধান্য রয়েছে। দল এখন এই অঞ্চলগুলি থেকে নির্ভরযোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করছে, এমন মুখ যারা সমাজবাদী পার্টির বিরোধী, দলের আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়।
পঞ্চায়েত থেকে বিজেপির জমির বিস্তার
বিজেপির লক্ষ্য কেবল পঞ্চায়েত জয় করা নয়, বরং স্থানীয় নেতা এবং প্রার্থীদের শক্তিশালী করে তাদের ভবিষ্যতের রাজনীতির সাথে যুক্ত করা। এই প্রার্থীদের নির্বাচনী কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি, দল স্থানীয় বিধায়ক এবং সাংসদদের সাথেও যুক্ত করছে, যাতে তাদের প্রশাসনিক সমর্থন থাকে এবং সরকারি প্রকল্পগুলি তাদের গ্রামে সহজে উপলব্ধ করা যায়। এর ফলে তাদের স্তরে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা বাড়বে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে বিজেপির উপস্থিতি আরও শক্তিশালী হবে।
বাসিত আলীর মতে, আগে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে দুটি গোষ্ঠী—সপা এবং बसपा—প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। কিন্তু এখন যখন बसपा দুর্বল হয়ে পড়েছে, বিজেপি এই জায়গাগুলিতে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে, যাতে মুসলমানদের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বিকল্প পাওয়া যায় এবং বিজেপির সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
2027-এর পথ তৈরি
এই কৌশলটি কেবল পঞ্চায়েতে আটকে থাকার গল্প নয়, বরং 2027 সালের প্রস্তুতিরও সূচনা। বিজেপির ধারণা, যখন এই মুসলিম নেতাদের পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিসি সদস্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, তখন তারা কেবল স্থানীয় সরকারি প্রকল্পগুলিতেই প্রবেশাধিকার পাবে না, বরং মানসিক স্তরেও মুসলিম ভোট ব্যাংকে পরিবর্তন আনবে। এর ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে আরও শক্তিশালী হবে।
দলের এই পদক্ষেপ একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—বিজেপি এখন কেবল হিন্দু ভোট ব্যাংকের উপর সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না, বরং সমাজবাদী পার্টির শক্তিশালী মুসলিম ভোটার গোষ্ঠীতেও ফাটল ধরাতে চাইছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় স্তরে এই ভিত্তি স্থাপন করা সমাজবাদী পার্টিকে বড় ধাক্কা দিতে পারে। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তবে 2027 সালের রাজনীতিতে বিজেপি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে।
বিজেপির এই কৌশল হিন্দু-মুসলিম সমীকরণে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে করা কোনো ষড়যন্ত্র নয়, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে তাদের জনসমর্থন তৈরির একটি সরাসরি প্রচেষ্টা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সাথে যুক্ত হয়ে স্থানীয় নেতৃত্বকে অনুমোদন দেওয়ার উদ্দেশ্য সমাজবাদী পার্টির মূল ভোট ব্যাংকে নির্বাচনী লড়াইকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এখন দেখার বিষয়, এই ত্রিভুজ কৌশল মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে বিজেপির বিশ্বাস অর্জন করতে পারে কিনা, নাকি সমাজবাদী পার্টি পুনরায় শক্তিশালী হয়ে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেবে।